সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষতি হয়নি।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরভরা ধান কাটার উৎসব। ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরপারের কৃষকেরা। সেই ধান রোদে শুকাতে দিন যাচ্ছে কিষানিদের।
সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। দুপুরের তপ্ত রোদ নেই। ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। কৃষক মাহমুদ আলীর দুই ছেলে হাবিবুল ও খায়রুল বস্তা ধরে আছে। সেই বস্তায় ধান ভরছেন তিনি। পাশেই ধান ঝেড়ে চিটা আলাদা করে ফেলছেন মাহমুদ আলীর স্ত্রী জবা বেগম। সারা দিন কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেও সবার মুখে তৃপ্তির ছাপ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার নির্বিঘ্নে হাওরের ধান তুলতে পারছেন তাঁরা। ফলনও ভালো হয়েছে। এসব কারণে ভীষণ খুশি তাঁরা।
করিম ও হেনা বেগম দম্পতির বাড়ি শনির হাওরপারের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। গত বুধবার বিকেলে কথা হয় হেনা বেগমের সঙ্গে। হেনা বেগম বলছিলেন, সেই ছোটবেলা থেকে হাওরে বৈশাখী ধান তোলেন। বাবার বাড়ি, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি—সবখানেই ধান তোলার কাজ করেছেন। কৃষক পরিবারের নারীদের এই কাজে কষ্টের চেয়ে আনন্দটাই বেশি। হেনা বেগমের ভাষায়, ‘ধানই ত আমরার সব। ধান পাইলে সারা বছর ঘরও খুশি থাকে। ধান না পাইলে বড় কষ্টে দিন যায়। এই কষ্ট আমরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝত না।’
হেনা বেগমের স্বামী করিম ধানের ফলন বেশি হওয়ায় খুশি। ধানের ফলন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ১০ কিয়ার (৩০ শতাংশে ১ কিয়ার) জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। সাড়ে সাত কিয়ার জমির ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর পর গোলায় তুলেছেন। সব মিলিয়ে ১৭০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন। গত বছর একই জমিতে ধান পেয়েছিলেন ৭৫ মণ। গতবার শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ায় ধান কম পান তাঁরা। বছরে তাঁর ঘরের খাবার ও অন্যান্য খরচ চালাতে ৮০ মণ ধান লাগে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি না হওয়ায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাহমুদ আলীর পরিবারের মতো সুনামগঞ্জের লাখো কৃষক পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা খেত থেকে উৎসবের আমেজে ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলার হাওরপারের কয়েকজন কৃষক বলেন, ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর এবার কোনো ঝামেলা ছাড়াই ধান গোলায় তুলতে পারছেন তাঁরা। গত বছরের এপ্রিলেও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় গোলায় রাখা ধানও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কয়েক বছর পর এবারই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছেন কৃষকেরা। তাই হাওরজুড়ে অন্যরকম এক উৎসব চলছে। দিনরাত ব্যস্ত হাওরের কৃষক পরিবারের লোকজন।