সিলেটপ্রতিনিধি: সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটক আলে ইমরান হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।এ ঘটনায় ঘাতক স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও গতকাল বুধবার ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত সোমবার বিকালে জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্ট’র পাশে পাথরচাপা অবস্থায় পর্যটক আলে ইমরানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ইমরান কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আলে ইমরানের স্ত্রী খোশনাহার বেগম, খোশনাহারের প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিন, মাহিনের অফিসের কর্মচারী নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার বেলদি গাজিরটেক গ্রামের মো.জিন্নাতের ছেলে নাদিম আহমেদ নাঈম ও বন্ধু রাকিব।
হত্যাকান্ড ও আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিহত আলে ইমরানের সাথে গত পাচঁ বছর আগে খোশনাহারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ফেসবুকে মাহিদুল হাসান মাহিনের সাথে পরিচয় হয় খোশনাহারের। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। দুই থেকে আড়াই বছর ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। প্রেমে জড়ানোর পর স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন খোশনাহার ও তার প্রেমিক। এরই ধারাবাহিকতায় স্বামী আলে ইমরানকে বেড়ানোর কথা বলে গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) ভৈরব হতে ট্রেন যোগে সিলেট আসেন। সিলেটে এসে জাফলংয়ের রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল ওঠেন। একইদিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসের কর্মচারী নাদিম ও রাকিব ঢাকার কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেট এসে জাফলংয়ের হোটেল শাহ আমিনে ওঠেন। হোটেল দুটির অবস্থান পাশাপাশি।
পুলিশ সুপার বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আলে ইমরানের স্ত্রী খোশনাহার হত্যাকান্ডের আগে কৌশলে তাদের অবস্থানরত হোটেল রুমের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরে মাথা ব্যথার ঔষধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে স্বামী আলে ইমরানকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যখন আলে ইমরান ঘুমিয়ে পড়েন তখন স্ত্রী খোশনাহার তার প্রেমিক মাহিনকে হোটেল রিয়ারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল এ আসার কথা বলেন। রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে সময় হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিয়ারভিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে স্ত্রী খোশনাহার ও তার প্রেমিক আলে ইমরানকে গলায় গামচা পেচিয়ে হত্যা করে। এসময় মাহিনের সহযোগী নাদিম ইমরানের পা চেপে ধরে ও অপর সহযোগী রাকিব রুমের বাহিরে পাহাড়া দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মাহিন ও তার সহযোগীরা ইমরানের মরদেহ হোটেলের পাশে পাথর চাপা দিয়ে রেখে সিলেট থেকে পালিয়ে যায়।
এসপি মামুন আরও বলেন- এ ঘটনার পর থেকে রহস্য উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে সিসি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরানো ও ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার কারণে আলে ইমরানের স্ত্রীকে সন্দেহ হয়। এরই সূত্র ধরে বুধবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরা থেকে আলে ইমরানের স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে এদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে গাইবান্ধা থেকে খোশনাহারের প্রেমিক মাহিন ও নারায়নগঞ্জ থেকে মাহিনের সহযোগী নাদিমকে গ্রেফতার করা হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে মাহিনের অপরসহযোগী রাকিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামীদের গ্রেফতার করতে সিলেট জেলা পুলিশের চারটি টিম কাজ করেছে বলে জানান পুলিশ সুপার।