স্টাফ রিপোর্ট: সারাদেশে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। আজকের দিনটা শ্রমিকদের।কিন্তু সে হিসেব নেই তাদের কাছে। কাজ করেই যাচ্ছেন সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন বিভিন্ন স্টোন ক্রাশার মিলগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা যখন ছুটিতে তখনি এখানকার শ্রমিকরা গ্রীস্মের কাঠফাঁটা রোদের মধ্যে কাজ করছেন। সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। সারা শরীর জবজবে ভেজা। জীর্ণ শীর্ণ শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় কেমন খাটুনি খাটচ্ছেন এই মানুষগুলো।
সরেজমিনে সিলেটের সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার বিভিন্ন স্টোন ক্রাশার মিলগুলোতে গিয়ে চোখে পড়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে আছেন।
সিলেটের এয়ারপোর্টের বাইশটিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন ইসলাম।ধোপাগুল সংলগ্ন স্টোন ক্রাশার মিলগুলোতে পাথর ভাঙার কাজ করে থাকেন তিনি।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা সুমন ইসলামের। তিনি জানান, আজকের মধ্যেই ভাঙতে হবে ২ ট্রাক পাথর।তাহলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত মজুরি। আমি মূলত পাথর ভাঙ্গার শ্রমিক। বড় বড় পাথরকে খন্ড খন্ড করে ক্রাশার মেশিনের সাইজ করতে হয় আমাকে।সারাদিনে দুই তিনজন মিলে দুই ট্রাক পাথর ভাঙ্গতে পারি। ৫৫০ ফিটের এক ট্রাক পাথর ভাংতে পারলে পাই ৭০০ টাকা। দুইট্রাকে ১৪০০ টাকা।তিনজন মিলে দিনশেষে ৪০০-৫০০ টাকা ভাগে জোটে।তারপর বাজার করে কোনমতে দিন যায় আমার।কাজ থাকলে খেয়ে পরে বাঁচতে পারি।কাজ না থাকলে অনেক কষ্ট করে ধারদেনা করে চলতে হয়।
শ্রমিক দিবস সম্পর্কে বলেন, আমাদের জন্ম হয়েছে কাজ করার জন্য।কাজ থাকলে আমরা থাকি, কাজ নেই আমরাও নেই। শ্রমিকরা সব জায়গায় বঞ্চনার শিকার। কোথাও আমাদের দাম নেই।আমরা সবদিক দিয়ে পিছিয়ে।জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনা।আমাদের কথা বলার কোন লোক নেই।শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন শুধুমাত্র অভাব আর পেট ভুখার কারণে আমাদের ঐক্য হয়না।
এদিকে শ্রমিক দিবসের ছুটি পেয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সিলেটের তেলিহাটি বাগানের চা-শ্রমিক সুকো দাস ও বাবলু গোয়ালা। বাগানের ডিউটি না থাকায় দুই বন্ধু ভোর ৬ টায় বের হয়েছেন লাকড়ি কুড়াতে।ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত দুজন মিলে লাকড়ি কুড়িয়েছেনও চার আটি।জনপ্রতি ভাগে পেয়েছেন দু আটি করে।দুজন মিলে চার আটি লাকড়ি নিয়ে সিলেট এয়ারপোর্ট-ধোপাগুল মহাসড়কে অপেক্ষা করছেন খদ্দরের।খানিক পরে পেলেনও একজনকে।তিনি একসাথে চার আটি জ্বালানীর বাঁশের লাকড়ি কিনে নিলেন চারশত চল্লিশ টাকায়।এতে যেন বেজায় খুশি হলেন সুকো দাস ও বাবলু গোয়ালা।
সুকো দাস জানান,আমরা শ্রমিক দিবস দিয়ে কি করব? আমাদের কথা কি কেউ শুনে? অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে গত বছর আমাদের মজুরি বাড়িয়েছি।আমরা কাজ করে খেয়ে পরে বাচলেই হয়।আমাদের ছুটি মানেই বিপদ।আমাদের পেটের জ্বালা আছে।আমাদের কোন বিশ্রামের দরকার নেই।আমরা ছুটির দিনেও বিশ্রামহীন।