সিলেট প্রতিনিধি: ২০১২ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর বনানী থেকে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য এম ইলিয়াস আলী ও গাড়িচালক আনসার আলী নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ১১ বছর আজ। দশ পেরিয়ে ১১ বছর হলেও তাদের খোঁজ পায়নি পরিবার। তার ফেরার প্রতীক্ষায় তারা। ইলিয়াস আলীর জন্মভূমি বিশ্বনাথে দল-মত-নির্বিশেষে সব বয়সের নারী-পুরুষ আশায় আছেন চিরচেনা সেই মানুষটি আবার তাদের মাঝে ফিরে আসবেন।নিখোঁজের ১১ বছর হলেও এখনো অপেক্ষায় তার পরিবার।তিনি ফিরে আসবেন বলে আশা করছেন তার দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির এই নেতা ও তার গাড়ি চালককে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি।
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রোববার (১৫এপ্রিল) প্রতিবাদী শোভাযাত্রা নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, এম ইলিয়াস আলীর গুমের ১১ বছর হবে আগামীকাল। ১১ বছর আগে ঢাকার বনানীতে নিজ বাসার কাছ থেকে তাকে ও তার গাড়িচালক আনছার আলীকে গুম করা হয়। এখন পর্যন্ত তাদের হদিস পাওয়া যায়নি। গুম হওয়ার পর সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাকে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ ১১ বছরেও তাঁদের সন্ধান দিতে পারেনি সরকার।
স্মারকলিপি প্রদানের আগে প্রতিবাদী শোভাযাত্রা পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সিলেটবাসীর প্রিয়নেতা ইলিয়াস আলীসহ অনেক নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। গুম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। বরং আন্দোলনের দাবানল তীব্র থেকে তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এই সরকারের বিদায় না হলে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের ফিরে পাওয়া কঠিন। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গুম ও খুনের পথ বেছে নিয়েছে। এসব গুম-খুন করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখা যাবে না। জনগণ জেগে উঠেছে, রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে অচিরেই স্বৈরাচারের পতন হবে।’
স্মারকলিপি দিয়ে যোহরের নামাজের পর হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর দরগাহ প্রাঙ্গণে এম ইলিয়াস আলীসহ নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের সন্ধান কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা নুরুল হক, এমদাদ আহমদ চৌধুরী, আশিক উদ্দিন, এ কে এম তারেক কালাম, ইকবাল বাহার চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, হাসান আহমদ পাটোয়ারী, তাজরুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, আনোয়ার হোসেন, আবু তাহের, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী, কোহিনুর আহমদ, শাকিল মোর্শেদ, মাহবুব আলম প্রমুখ।
যেভাবে নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলী
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী। তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী।
ইলিয়াসের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে। ওই এলাকার (সিলেট-২) এমপিও ছিলেন তিনি।রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেটকার উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক আনসার।
বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন সূত্রে জানা যায়, গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।
নিখোঁজের বিষয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা রাতে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি বাসায় ছিলাম না। উনি (ইলিয়াস) রাত পৌনে ১০টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে থানা থেকে ফোনে জানানো হয়, তার গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে; তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
তার অপেক্ষায় এখনো পরিবার
জানা যায়, ইলিয়াছ আলীর সন্তানরা জানে না যে তাদের বাবা বেঁচে আছে না মরে গেছে। তারা বাবার ছবি বারবার নেড়েচেড়ে দেখে। তেমনি মা সূর্যবান বিবি জানেন না ইলিয়াসের মুখে মা ডাক আর শুনবেন কি না। সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় আজও পথ চেয়ে বসে থাকেন মা সূর্যবান বিবি। আর স্ত্রী লুনা এখনো অপেক্ষায় তার স্বামী একদিন ফিরে আসবেন।
এম. ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি’র ৭শত নেতাকর্মীকে গুম করে রাখা হয়েছে
সম্প্রতি বিশ্বনাথ উপজেলা, পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীর সন্ধান দাবিতে ইফতার পূর্ব প্রতিবাদ সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা, সিলেট ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ‘নিখোঁজ’ এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, আজকাল মানুষের কথা বলার কোন অধিকার নেই। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলাত দুরের কথা, মানুষের ভাতের অধিকার চাইতে গেলেও তাদেরকে মামলা দিয়ে জেল খাটতে হয়। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে।
তাহসিনা রুশদীর আরো বলেন, এই সরকারের আমলে আজ ১১ বছর ধরে এম. ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি’র ৭শত নেতাকর্মীকে গুম করে রাখা হয়েছে। ক্রস ফায়ার ও মামলা হামলার স্বীকার হয়েছেন আরো অসংখ্য নেতাকর্মী। এদের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই। যারা গুমের সাথে জড়িত থাকে তাদের কাছে বিচার চেয়ে কি লাভ?