গত কয়েক দিনের তীব্র গরম ও তাবদাহের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকাশ আধার করে কালবৈশাখীসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনভর হাঁসফাঁস গরমের পর ঝড়-বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে রাজশাহী অঞ্চলে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আম,ধান, ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বজ্রপাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুইজন, সাতক্ষীরায় দুইজন, যশোর, মেহেরপুর, রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহে একজন করে মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে ছিল ঝলমলে তপ্ত রোদ। বেলা গড়াতেই বাড়তে থাকে তাপমাত্রার পারদ। গরমে হাঁসফাঁস হয়ে ওঠে জনজীবন। বিকেলে হঠাৎ আকাশে সজল সঘন মেঘের ঘনঘটা। সাড়ে ৪টার দিকে আঁধার হয়ে ওঠে প্রকৃতি। শেষ বিকেলেই রাতের অন্ধকার নেমে আসে রাজধানীতে। এতে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে বাধ্য হন চালকরা। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। ক্রমে বাড়ে। প্রথমে ধূলিঝড়, এরপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব। শেষে বৃষ্টিস্নাত হলো রাজধানী ঢাকা। সঙ্গে ছিল বজ্রপাতও। আবহাওয়া দফতরের হিসাবে রাজধানীতে ৭৪ কিলোমিটার বেগে বয়ে গেছে ঝড়-বৃষ্টি।
এদিক হঠাৎ বৃষ্টিতে অফিস থেকে ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণের জন্য অনেকে ছোটাছুটি করেন। দৌড়ে অনেকে আশ্রয় নেন দোকান-যাত্রী ছাউনিতে। কাকভেজা হয়ে গণপরিবহনে ওঠেন অনেকে। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝড়-বৃষ্টির পর গরম অনেকটাই কমে স্বস্তি ফিরেছে ঢাকায়।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার এয়ারপোর্টে সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার ও আগারগাঁওয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী ঝড়ের রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় পাঁচ থেকে আট মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু রাজধানীর এই ঝড় ১২ মিনিট ধরে চলে। তিনি আরও জানান, দিনে একটানা দীর্ঘ সময় বেশি তাপমাত্রা থাকলে এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে বিকেলে কালবৈশাখীর জন্য অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হয়। আজ (গতকাল) এ কারণেই কালবৈশাখী আঘাত হানে। আগামীকাল (আজ) শুক্রবারও ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগের দু-একটি জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে। এছাড়া দেশের ১৪টি অঞ্চলে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়োহাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হয়েছে।
বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু:ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে আমবাগানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন: উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের মো. আবদুল কাদেরের ছেলে মো. শাহিন (২০) ও একই ইউনিয়নের শরত্নগর গ্রামের মো. হারুন আলীর ছেলে মো. অসিম (১৪)।
বজ্রপাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গার বিহারিনগরে অহেদ মিস্ত্রির ছেলে আবদুল্লাহ মিস্ত্রি মারা গেছেন। একই সময়ে কলারোয়া উপজেলার কায়বা গ্রামের কামরুল ইসলাম নামে আরও একজন বজ্রপাতে মারা যান।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় বজ্রপাতে শাহাবুদ্দিন (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কৃষক শাহাবুদ্দিন দারিয়াপুর গ্রামের স্কুল পাড়ার মৃত আলীমুদ্দীনের ছেলে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় মাঠে করলা তোলার সময় বজ্রপাতে সাইদুল মৃধা (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত সাইদুল উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের খালেক মৃধা পাড়ার মো. জামাল মৃধার ছেলে।এছাড়া যশোরের শার্শা উপজেলায় মাঠে ধান তোলার সময় বজ্রপাতে কৃষক আজিজুল ইসলামের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি একই গ্রামের মৃত কামাল সরদার কিনুর ছেলে।
ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে আম ও ফসলের ক্ষতি:এদিকে রাজশাহী অঞ্চলে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আম, ধান, ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই তিন জেলার অন্তত ১০টি উপজেলার ওপর দিয়ে ঝড় ও শিলা বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
রাজশাহীর পুঠিয়া, দূর্গাপুর, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনিতেই প্রচন্ড রোদ ও খরায় আমের বোটা শুকিয়ে ছিল। তাই সামান্য ঝড়েই গাছ থেকে ঝরে পড়েছে শত শত মণ কাঁচা আম।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীর তানোর, দুর্গাপুর, পবা ও পুঠিয়া এলাকায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কথা শুনেছি। তবে অফিসিয়াল কোনো তথ্য এখনো আমাদের হাতে পৌঁছেনি।