ডেস্ক রিপোর্ট :লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলায় আরও ছয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাব চারজনকে ও পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। জোড়া খুনের মামলায় এ নিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
সোমবার দুপুরে র্যাবের নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান নিশান, রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান ফয়সাল, আওয়ামী লীগ কর্মী রুবেল দেওয়ান ও নাজমুল হোসেন। এর মধ্যে নিশান ও রুবেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
রোববার রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।এ ছাড়া রোববার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে ফারুক হোসেন ও আরমান হোসেন নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চার আসামিকে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁদের চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারা হলেন মনির হোসেন রুবেল, আজিজুল ইসলাম বাবলু, মো. সবুজ ও ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী।
র্যাবের নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নোমান-রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদী ১৯৯৬ সালে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তাঁর বাহিনীতে ৩০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যাদের মাধ্যমে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের চন্দ্রগঞ্জ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, কাশেম জিহাদী তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০১৩ সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন শামিম, ২০০০ সালে আইনজীবী নুরুল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূঁইয়া ও কামাল হোসেন হত্যা মামলারও প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, রিমান্ডে থাকা চার আসামির দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদীসহ অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও বিক্ষোভ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর বশিকপুরসহ আশপাশের এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে পোদ্দার বাজার থেকে নাগের হাটে যাচ্ছিলেন যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম। পশ্চিম বাজার এলাকার ব্রিজের কাছে গেলে তাঁদের লক্ষ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। তাতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত রাকিব ইমামকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান। পরদিন নিহত নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে হত্যা মামলা করেন।