বাঙালির প্রিয় এই ফুলের জন্ম নাকি এখানে নয়। এর আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। আর রাধাচূড়ার জন্ম নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজে। হতে পারে। কত অতিথিকেই তো আপন করে নিয়েছে বাঙালি।
জানি না শ্রীরাধিকার প্রিয় ছিল কি না রাধাচূড়া’- গানে গানে এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন কবির সুমন। কৃষ্ণচূড়া নিয়েও একই প্রশ্ন করা যায়, শ্রীকৃষ্ণের কি পছন্দের ফুল ছিল এটি? কৃষ্ণ কি লাল ফুলে মজেছিলেন?
এসব প্রশ্নের জুতসই কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। যেমন জানা যায় না কৃষ্ণচূড়া নামকরণের রহস্য।
নিসর্গ লেখক আমিরুল আলম খান এই নামকরণের একটা কাহিনি শুনিয়েছেন তার ‘পারুলের সন্ধানে’ বইতে। আমিরুল লিখেছেন, ‘এক রাজকবি কৃষ্ণের মাথার চূড়ার বর্ণনা করতে গিয়ে রক্তবর্ণ এই ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই থেকে এই ফুলকে কৃষ্ণচূড়া বলে ডাকা হয়। অন্যদিকে কৃষ্ণের প্রেয়সী রাধাকে উপলক্ষ করে রাধাচূড়া নামকরণ করা হয়।’
হলেও হতে পারে। সে যাই হোক। নামে কী-ইবা এসে যায়! ফুল সুন্দর কি না, গন্ধ বিলায় কি না, সেটাই তো মুখ্য।
ভাবছেন, হঠাৎ কৃষ্ণচূড়া নিয়ে এমন তথ্যতালাশের হেতু কী? একেবারে মিছেমিছি নয় কিন্তু। এখন দিনই যে কৃষ্ণচূড়ার। দিকে দিকে লাল আভা ছড়িয়ে ফুটেছে এ ফুল।
নগরের ইট-সিমেন্টের জঞ্জালের মধ্যেও এই ফুল একেবারে দুর্লভ নয়। নানা জায়গায়ই এর দেখা মেলে। মন কেড়ে নেয়া এমন সুন্দর যে ফুল, তার নামকরণ নিয়ে আগ্রহ তো হতেই পারে।
পলাশ-শিমুল যদি বসন্তের প্রতীক হয়, কদম যদি হয় বর্ষার, তবে কৃষ্ণচূড়া নিশ্চয়ই গ্রীষ্মের প্রতীক। গ্রীষ্মের তপ্ত দিনেই ফোটে এটি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে এখন আগুন লেগেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে মোরগের লাল ঝুঁটির মতো ফুটেছে ফুল।
সবুজের মাঝে লাল- এ তো বাংলাদেশেরই রূপ।
বসন্তের প্রকৃতি নিয়ে বাঙালির যত আদিখ্যেতা-রোমান্টিকতা দেখা যায়, গ্রীষ্ম নিয়ে তার ছিটেফোটাও নেই। কবিদের সব কবিতা-গানও যেন বর্ষা আর বসন্ত নিয়ে। গ্রীষ্ম বড় অবহেলিত। নিজের রৌদ্র-তেজোদীপ্ত রূপের কারণেই কি গ্রীষ্ম রোমান্টিক বাঙালির অনাদরণীয়?
গ্রীষ্মে মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। গরম তো তীব্র গরম। ঝড় তো বিরাট ঝড়। এ বুঝি বাঙালির পছন্দ নয়! তবে কেবল বসন্তে নয়, গ্রীষ্মেও কিন্তু নানা ফুল ফোটে। বৃক্ষসখা দ্বিজেন শর্মার ‘ফুলগুলি যেন কথা’ বইতে গ্রীষ্মের নানা ফুলের বর্ণনা পাওয়া যায়।
উদ্ভিদবিদদের মতে, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। উষ্ণ ও শুকনো আবহাওয়া এ ফুলের উপযোগী। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে কৃষ্ণচূড়া ফোটে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া।