ডেস্ক রিপোর্ট: ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায়, দেশ ও জনগণের তত মঙ্গল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো স্বৈরাচার সরকার আপসে ক্ষমতা ছাড়েনি। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) মুক্ত নির্বাচন হতে হবে। তার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্দলীয় অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, ভবিষ্যতে হতে পারে না। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে, জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য দেশে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র একে অপরের সম্পূরক। গণতন্ত্রের অর্থই হচ্ছে খালেদা জিয়া। আজকে নেত্রী কারাগারে। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করার কারণে আজকে মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তেমনিভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও একটি বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা স্বৈরাচারি। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে দেশনেত্রী কারাগারে গৃহবন্দি। তাই এদেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চায়।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অর্থনীতি লুটপাট করে এদেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছেন। ১-১১তে সংবিধান বহির্ভূতভাবে জরুরি আইন করে যারা সরকারে ছিল, তারা এদেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে গিয়েছে। এরপর এই সরকার গায়ের জোরে প্রতিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচন এদেশের মানুষ বয়কট করেছিল। নির্বাচন বয়কট হওয়ার পরও এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকেছে। ২০১৮ সালে তারা দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই সরকার ঠেকাতে পারছে না। কারণ তাদের সিন্ডিকেট, তাদের ব্যবসায়ীরা এদেশের মানুষের পকেট থেকে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করার জন্য এই পরিস্থিত সৃষ্টি করেছে। আজ মধ্যবিত্ত মানুষ গরিব হয়ে যাচ্ছে। তারা পেট চালাতে পারে না। সেই অবস্থায় আজকে দেশকে এই সরকারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘শহিদ জিয়াউর রহমান একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধা তৈরির ফ্যাক্টরির নাম বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকার বেআইনিভাবে মুক্তিযোদ্ধা উৎপাদন করেছে। যেদিন এই সরকার পালাবে, সেদিন ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও পালিয়ে যাবে। কারণ আসল আর নকল একসঙ্গে চলতে পারে না। পাঁচ বছর, দশ বছর বয়সে কখনো মুক্তিযোদ্ধা হয় না। আমরা দেশের সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চাই’।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘পানি যেমন কাটা যায় না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ ও বিএনপিকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহিদ জিয়াউর রহমান পানির মতো সমান্তরাল। এর মাঝখানে যতই কাটার চেষ্টা করা হোক, তা কখনোই সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন মন্ত্রীও আছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যাদের বয়স ছিল তিন বছর। আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলেন। সেই আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১১ বছর’।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।