আমাদের শৈশবের দুরন্তপনায় মিশে আছে হাজারো রঙিন স্মৃতি। স্মৃতিতে মিশে আছে শত শত হাসিমাখা আনন্দ, মজা,ও হৈ হুল্লোড়ের কেন্দ্রে ছিলো গ্রামীণ সৌন্দর্যপূর্ণ জীবনযাত্রার খেলাধুলাগুলো। আর আমাদের গ্রামীণ শৈশবের খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম একটি প্রিয় খেলা হলো এই লাটিম। এটি শুধু খেলায় এর সঙ্গে মিশে আছে ছোটবেলার বাবার পকেট ও মায়ের মাটির ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে লাটিম কেনার একরাশ স্মৃতি। এই স্মৃতিময় খেলনাটির দাম ছিলো মাত্র ২,৩ ও ৫ টাকা। কাঠের ফ্রেমে তৈরি মাথায় লাগানো চিকন লোহার শলাকার সাথে ১-২ হাত লম্বা দড়ি নিয়ে সবসময় ছুটে চলতাম,ঘুরে বেড়াতাম সর্বদা সাথে নিয়ে আর সহযোগীদের সাথে মেতে উঠতাম এক প্রাণবন্ত প্রতিযোগিতায়। যেখানে ছিলো লাটিম ঘুরিয়ে একে অপরকে ছাঁড়িয়ে যাওয়ার মধুর প্রতিযোগিতায়।হাতের আঙুলে প্যাঁচানো দড়ি থেকে হেঁচকা টান দিয়ে মাটি বা শক্ত সমতলে ছুঁড়ে মারা খেলায় যে কি একটা আবেগ কাজ করতো সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মাটিতে ছুড়ে মারা লাটিমটি কখনো কখনো দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে হাতে তালুতে তুলে ঘুরানোর মজাটাই আলাদা।সবাইকে ডেকে ডেকে দেখানো এবং পাগলের মতো বলে ওঠা “সবাই দেখো! দেখো! ম্যাজিক!ম্যাজিক! এবং বড়দের সেই তাকানো এবং বলা কথা গুলোর ভাষা বড়ই আনন্দদায়ক ছিলো।
লাটিমের ফিতা ও লাটিম দিয়ে একটা বৃত্ত আকার পরে সেই বৃত্তের ভিতরে লাটিম ঘুরিয়ে কারটা কত বেশী সময় ঘুরতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলতো।আবার একজন কি ভাবে তার লাটিম দিয়ে অন্যজনের লাটিমকে নষ্ট করবে তার জোরালো প্রতিযোগিতা চলতো। এই স্মৃতিময় লাটিম খেলায় কাউকে হারিয়ে দেওয়ার যে সুখস্মৃতি তা এখনো চোখে লেগে আছে। আবার কখনো সহযোগীদের কাছে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে নিজের লাটিমটাকে নষ্ট হতে দেখার স্মৃতি এখনো পীড়িত করে নিজের অজান্তেই। তখনকার সেই লাটিম নষ্ট হয়ে গেলে আবার নতুন লাটিম কেনার জন্য বাবা মায়ের কাছে বায়না ধরা এবং রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় বাবার আমার জন্য নতুন লাটিম কিনে আনা সবকিছু আজও স্মৃতিতে অমলিন।পরেরদিন সকালে আবার নতুন লাটিম নিয়ে সহযোগীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া, তাদের সাথে গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার দিনগুলো আজও খুবই স্মৃতিময়। জীবনের পরিক্রমায় আজ সেই মধুর শৈশব পেরিয়ে চলে এসেছি কিন্তু মনটা আজও সেই স্মৃতিময় শৈশবে পড়ে আছে।মন আজও চাই ফিরে যেতে শৈশবের সেই দুরন্তপনায়। যেখানে থাকবে না কোনো মানসিক চাপ, থাকবে না কোনো হতাশা,থাকবে না কোনো দুশ্চিন্তা, থাকবে শুধু হাসি, মজা, আনন্দ ও প্রকৃতির বুকে অবিরাম ছুটে চলা।জানি আর কখনো শৈশবের সেই সুমধুর স্মৃতিতে ফিরতে পারবো না তবুও সেই স্মৃতিতে ফেরার আকাঙ্ক্ষা সারাজীবন থাকবে।আর শৈশবের স্মৃতি আঁকড়ে এভাবেই সামনে চলতে থাকবো ইনশা-আল্লাহ।
-খাঁন সোহানুর রহমান সোহান