স্টাফ রিপোর্ট:: সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে সাত দিন আগে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে এসেছিলেন সৌরভ মিয়া(২৭)।পরে বাড়ির লোকদের না জানিয়ে পরিচিতজনদের সাথে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে লেগে যান।আর তার গ্রামের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্রী পছন্দ করে রেখেছিলেন মা আমিনা বেগম। কিন্তু কে জানতো সৌরভ বাড়িতে ফিরবে লাশ হয়েছে। ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
বুধবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপতালে।
ছেলে সৌরভকে হারিয়ে মা আমিনা বেগম বার বার কান্না ভেঙ্গে পড়ছিলেন। সৌরভের বাবা সিরাজ মিয়াও এসেছিলেন হাসপতালে।বার বার নিজেদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেও পারছিলেন না।কান্না জড়িত কন্ঠে আমিনা বেগম বলে উঠেছিলেন ‘আমার পুতরে (ছেলে) বিয়া কারইতে আসলাম, মেয়ে দেখি রাখছিলাম গো। আমার পুতের কিতা হইল, তোমরা আমার পুতরে আনি দেও।’
সৌরভের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা মা জানান, সৌরভ বেড়াতে এসে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় পরিচিতদের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।
অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটে উঠার আগেই সিলেট থেকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে যাওয়ার জন্য পিকআপে উঠেন সৌরভসহ ৩০ জন নির্মাণশ্রমিক।
পথে ভোর ৬টার দিকে দক্ষিণ সুরমায় নাজিরবাজারের কুতুবপুর এলাকায় (ঢাকা-সিলেট) মহাসড়কে বালুবাহী একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে সৌরভসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০জন।
এ ঘটনায় আহতাবস্থায় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন পাপ্পু দাস। তার ভাষ্যমতে, ‘ভোরে নগরীর আম্বরখান পয়েন্ট থেকে আমরা প্রায় ২৮ থেকে ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক গোয়ালাবাজার যাওয়া জন্য রওনা হয়েছিলাম। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকটি আমাদের পিকআপকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো ফেলে দেয়।
‘এতে ঘটনাস্থলেই এক নারী শ্রমিকসহ কয়েকজন মারা যান। পরে পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমার পা ও মাথায় আঘাত পেয়েছি।’
এব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মালবাহী একটি ট্রাকের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৮ জনকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
হাসপাতালে ভর্তির পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয় বলে ওসমানী মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জুয়েল আহমেদ চৌধুরী জানান।