আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আরেকবার বড় স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা। স্বপ্নটা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার। তবে বাস্তবতা বড় স্বপ্ন দেখতে মানা করছে। ২০০৩ সাফ শিরোপা জয়ের পর থেকেই এই টুর্নামেন্টের সাফল্য অধরা বাংলাদেশের। শেষ পাঁচবারে তো প্রথমপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। এবার তো সাফের মঞ্চটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দুটি দেশের সংযুক্তিতে। যার একটি লেবানন। যাদের বিপক্ষে আজ শুরু হবে বাংলাদেশের অভিযান। ভারতের বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ৪টায় শুরু হবে আপাতদৃষ্টিতে এই অসম লড়াই।
র্যাংকিংয়ে লেবানন রয়েছে ৯৯তম স্থানে। বাংলাদেশের চেয়ে পাক্কা ৯৩ ধাপ এগিয়ে। এ কারণেই এটা অসম লড়াই। অনেকটা নিশ্চিত হার জেনেই খেলতে নামা বাংলাদেশের জন্য। তবে জানা আর মানায় যে খানিকটা ফারাক আছে। কোনো দলই যে আগেভাগে হারতে চায় না। বাংলাদেশও তাই। হারার আগে সামর্থ্যরে পুরোটা ঢেলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে লাল-সুবজের ধারকরা। বাংলাদেশের কোচ-অধিনায়ক তো প্রবল প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কিছু নিয়ে ফেরার কথাও বলছেন। র্যাংকিংয়ে, শক্তিতে যতই লেবানন এগিয়ে থাকুক, বাংলাদেশ সাহস পাচ্ছে প্রতিপক্ষের কিছু কিছু দুর্বলতার জায়গার খোঁজ পেয়ে।
এই বছর লেবানন পাঁচটি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র একটিতে। শেষ ১০ ম্যাচে ওই একটাই জয়, সেটাও ভারতের ভুবনেশ্বরে গেল সপ্তাহে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে দুর্বল ভানুয়াতুর বিপক্ষে। মঙ্গোলিয়া ও ভারতের সঙ্গে গ্রুপপর্বে ড্র করে ফাইনালে উঠলেও স্বাগতিকদের কাছে তিনদিন আগে ফাইনালে হারতে হয়েছে ২-০ ব্যবধানে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তাদের খেলতে হয়েছে চারটি ম্যাচ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তি ভর করেছে লেবানিজ ফুটবলারদের মধ্যে। ভুবনেশ্বর থেকে বেঙ্গালুরু দুদিন আগে পা রেখে তাদের নিতে হয়েছে বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশ তো অঘটন ঘটিয়েও ফেলতে পারে!
অতীতেও লেবাননকে হারানো সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ঘরের মাঠে দারুণ খেলে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-০ গোলে। তার আগে অবশ্য প্রথমপর্বে লেবাননে গিয়ে হারতে হয়েছিল ৪-০ ব্যবধানে। এটা হতে যাচ্ছে দুদলের তৃতীয় সাক্ষাৎ। সেটাও পাক্কা ১১ বছর পর। এই সময়টায় লেবানন যতটা এগিয়েছে, ঠিক ততটাই পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এখন তাদের লুটোপুটি খেতে হচ্ছে র্যাংকিংয়ের তলানিতে। এখনকার বাংলাদেশের কাছে মালদ্বীপ, নেপাল এমনকি ভুটানও কঠিন প্রতিপক্ষ। তারপরও লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। সম্প্রতি কম্বোডিয়া সফরে থেকে কুড়িয়ে নেওয়া দুটি জয়ের অনুপ্রেরণা সঙ্গী করে আজ মাঠে নামবেন জামাল ভুঁইয়ারা। যদিও কম্বোডিয়া জাতীয় দল ও সে দেশের শীর্ষ লিগের দল টিফি আর্মি এফসিকে হারালেও খেলায় ছিল না পরিকল্পনার ছাপ।
সেই দুই জয়ের আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে বেঙ্গালুরুতে পাঁচদিন আগে পা রাখে বাংলাদেশ। সেখানকার জল-হাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। বিকেলে তপ্ত আবহাওয়ায় শুরু হবে ম্যাচ। তাতে ভড়কে না গিয়ে কাবরেরার চোখ অঘটনে, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, শতভাগ দিয়ে ম্যাচে চেষ্টা করব। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নির্ভর করছে নিজেদের ওপর। অবশ্যই বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। আমরা অবশ্যই মাঠে যাব তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে। সেটা যদি নাও হয়, আমরা কমপক্ষে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাই। ধীরে ধীরে আমরা প্রতিপক্ষের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। এখন মনোযোগের বেশিরভাগটা লেবাননের দিকে। একই সঙ্গে পরের দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।’
বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বাংলাদেশ দলকে কৃত্রিম টার্ফে অনুশীলন করতে হয়েছে চারদিন। এ নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ নেই কাবরেরার, ‘আমাদের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। সবাইকেই টার্ফে অনুশীলন করতে হয়েছে। তবে ওখানে অন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল। আমরা কাল ম্যাচটা খেলব যেখানে সেই ঘাসের মাঠ টার্ফের চেয়ে অনেক গতিময় হবে। আমাদের সেভাবেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।’
অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া লেবাননের ক্লান্তির সুযোগটা কাজে লাগানোর কথা বলেছেন কাল, ‘আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। কাল (আজ) ফাইনাল পরীক্ষা। তাতে পাস করতে চাই। অবশ্যই আমরা জিততে চাই। তবে এক পয়েন্ট নিতে পারলেও খুশি হব। তবে ওরা র্যাংকিংয়ে ৯০ ধাপের ওপরে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এটা বুঝি কাজটা কঠিন হবে। লেবানন অনেক শক্তিশালী দল। তবে শেষ ১২ দিনে ওরা চারটা ম্যাচ খেলেছে। তাতে ওরা একটু ক্লান্ত আছে। ওইখানে হয়তো আমাদের বাড়তি কিছুটা সুবিধা থাকবে।’
লেবাননের সার্বিয়ান কোচ আলেকজান্ডার ইলিচও মনে করেন অল্প সময়ে চারটা ম্যাচ খেলে নতুন শহরে এসে বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের। মঙ্গলবার প্রাক-টুর্নামেন্ট সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা কিছু বলেননি। তবে প্রথমবার এই টুর্নামেন্ট থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আসার কথা বলেছেন ইলিচ, ‘আমরা আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলে এখানে এসেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছি। আমাদের মূল লক্ষ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করা।’
শেষ দুই সেশনে কাবরেরা দলের সব ফুটবলারকে ঝালিয়ে দেখেছেন। টুকটাক চোট সমস্যাগুলো কাটিয়ে দলের সবাই প্রস্তুত নিজেদের প্রমাণে। নিজেদের ঘর সামলে গোলের সুযোগ কাজে লাগানোর মন্ত্র নিয়েই অসাধ্য সাধনের লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।