বর্তমানে শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয় “কোকোমেলন” কার্টুন একটি অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এই কার্টুনটি ছোট শিশুদের জন্য গানের মাধ্যমে শিক্ষামূলক কনটেন্ট প্রদান করে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই কার্টুনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কোকোমেলন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হয়, তার রঙিন চরিত্র এবং সহজ গান দ্বারা শিশুকে আকর্ষণ করে। কিন্তু, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের শারীরিক সুস্থতার ওপর বিপদজনক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে টিভি বা মোবাইল স্ক্রিনের সামনে থাকার ফলে শিশুর চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ২ বছরের নিচে শিশুদের স্ক্রিন টাইম এক ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম তাদের মানসিক এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কার্টুনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি শিশুর সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, কারণ তারা বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সমস্যায় পড়তে পারে।
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের প্রভাব শিশুদের সৃজনশীলতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক গঠনেও প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ বাড়াতে, বাইরের খেলাধুলা, বই পড়া, এবং সামাজিক যোগাযোগে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবার এবং অভিভাবকদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা শিশুদের স্ক্রিন টাইম সীমিত করে এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেন।
সঠিক দিকনির্দেশনায়, কোকোমেলনের মতো কার্টুন শিশুর বিকাশে সহায়ক হতে পারে, তবে অতিরিক্ততা কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়।
অতিরিক্ত কার্টুন দেখা শিশুর জন্য ক্ষতিকর
যদিও কোকোমেলন শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক, তবে এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি শিশুদের জন্য কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
১. শারীরিক সমস্যা:
শিশুরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে টিভি বা মোবাইল স্ক্রিনের সামনে বসে থাকে, তখন তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এটি বিশেষ করে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, এবং শারীরিক অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পাশাপাশি, দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে শিশুদের শরীরের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরো বড় শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
২. মানসিক সমস্যাঃ
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে কোকোমেলনের মতো ডিজিটাল কনটেন্ট, যা দ্রুত পরিবর্তিত দৃশ্য এবং আকর্ষণীয় গান ব্যবহার করে, তা শিশুদের মনোযোগের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে তারা বাস্তব জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে সমস্যা অনুভব করতে পারে।
৩. সোশ্যাল স্কিলসের উন্নয়ন বিলম্ব:
কোকোমেলনের মতো কার্টুনগুলোর প্রতি আসক্তি শিশুর সামাজিক দক্ষতা বিকাশে বাধা দিতে পারে। যখন শিশুদের সময় কেবলমাত্র স্ক্রিনে ব্যয় হয়, তখন তারা অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলা বা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এটি তাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
কীভাবে আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করবেন?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোকোমেলনের প্রতি শিশুর আসক্তি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? বিশেষজ্ঞরা কিছু কার্যকর উপায় প্রস্তাব করেছেন:
১. স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ করুন:
শিশুদের জন্য প্রতিদিন স্ক্রিন টাইম নির্দিষ্ট করা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পরামর্শ দেয় যে, ২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য স্ক্রিন টাইম ১ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয় এবং ২ বছর বয়সের পর ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম সীমিত রাখা উচিত।
২. শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ান:
শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন। শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
৩. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেট করুন:
মোবাইল এবং টিভি সেটিংসের মাধ্যমে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেট করা যেতে পারে, যা শিশুদের স্ক্রিন টাইম এবং দেখা কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৪. পাঠ্যপুস্তক ও খেলনা:
শিশুদের বই পড়ার এবং নতুন খেলনা দিয়ে খেলতে উৎসাহিত করুন। এটি তাদের মস্তিষ্কের উন্নতি এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সাহায্য করবে।
