বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ধীরে ধীরে ঘণীভূত হয়ে এখন নিম্নচাপের রূপ নিয়েছে। এটি পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী হতে পারে।
নিম্নচাপের অবস্থান ও গতিপথ
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৬টায় নিম্নচাপের কেন্দ্রটি অবস্থান করছিল —
- চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে,
- কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১,২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে,
- মোংলা বন্দর থেকে ১,৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে,
- এবং পায়রা বন্দর থেকে প্রায় ১,২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে এক পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অফিস।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর বেশ উত্তাল অবস্থায় রয়েছে।
১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর — চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা — সমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো, সাগরের গভীরে নিম্নচাপ সক্রিয় থাকায় দূরবর্তী এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে, তবে এখনই বড় ধরনের বিপদ সংকেত নয়।
তবে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে ও সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের গভীর সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা: আবহাওয়াবিদদের বিশ্লেষণ
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মৌসুমি বায়ু এখনো বঙ্গোপসাগরের ওপর সক্রিয় থাকায়, সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ সাধারণত বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির উপযুক্ত সময় হিসেবেই বিবেচিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল হুদা বলেন, “বর্তমান তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের তারতম্য ঘূর্ণিঝড়ের জন্মের অনুকূলে রয়েছে। তাই এটি যদি স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়, তবে উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় প্রথমে নিম্নচাপ ও তারপর গভীর নিম্নচাপের মধ্য দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে। ফলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
উপকূলে সতর্কতা ও প্রস্তুতি
এদিকে উপকূলীয় জেলা প্রশাসনগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা বন্দরে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হবে এবং মৎস্যজীবীদের নিরাপদ স্থানে ফেরার জন্য মাইকিং চলছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই দিন আগে গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। এখন খবর পেয়ে আমরা উপকূলে ফিরে আসছি। সাগরে বাতাস বেড়েছে, ঢেউ অনেক বড়।”
সম্ভাব্য প্রভাব
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপটি স্থলভাগের কাছাকাছি আসলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে। আগামী ২–৩ দিনে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এখনই আতঙ্কের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরিস্থিতি প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
সতর্ক বার্তা
আবহাওয়া অধিদপ্তর সবাইকে পরামর্শ দিয়েছে —
- অপ্রয়োজনে সমুদ্রে বা গভীর জলে না যেতে,
- নৌযানগুলোকে নিরাপদ স্থানে নোঙর করতে,
- এবং আবহাওয়া অফিসের পরবর্তী নির্দেশনার প্রতি সচেতন থাকতে।
দেশের উপকূলীয় মানুষ এখন তাকিয়ে আছে বঙ্গোপসাগরের দিকেই—এই নিম্নচাপ কি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে, নাকি দুর্বল হয়ে মিলিয়ে যাবে, তার উত্তর মিলবে আগামী কয়েক দিনে।









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited