সারাদেশে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে রাতের তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন আসবে না— যা শরৎ থেকে হেমন্তে যাওয়ার এই সময়ে আবহাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-একটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, একই সময়ে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, “বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আগামী দুই দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। মৌসুমি বায়ু এখনো সক্রিয় আছে, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। এর ফলে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে, তবে রাতের তাপমাত্রা খুব একটা পরিবর্তন হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। দিনের আলো কম পাওয়ার কারণেও শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হবে।”
মৌসুমি বায়ুর অবস্থান ও প্রভাব
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বাড়তি অংশ বর্তমানে ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এর মানে, বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা আর্দ্র বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবলভাবে প্রভাব ফেলছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বৃষ্টির প্রবণতা বেশি দেখা দেবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ ধরনের পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
শরতের শেষ প্রান্তে ঋতুর পরিবর্তনের ইঙ্গিত
আবহাওয়াবিদদের মতে, বছরের এই সময়টা শরৎকাল থেকে হেমন্তে যাওয়ার সংযোগকাল। সাধারণত এই সময়ে দিনের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, রাতে হালকা ঠান্ডা অনুভূত হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলে বৃষ্টি অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব থাকে। এরপর এটি সরে গেলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে শীতল বাতাস প্রবেশ শুরু করে। তাই এখনকার বৃষ্টি মৌসুমের শেষ দিকের স্বাভাবিক বৃষ্টি।”
সূর্যোদয়–সূর্যাস্তের সময়
আজ দেশের সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ৩৬ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে। অর্থাৎ দিন ক্রমশ ছোট হচ্ছে— যা শীতকাল আসন্ন হওয়ার আরেকটি লক্ষণ।
কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব
এই বৃষ্টি কৃষিক্ষেত্রে মিশ্র প্রভাব ফেলতে পারে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মৌসুমি বৃষ্টির এই শেষ ধাপটি যদি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, তাহলে শীতকালীন ফসলের জন্য মাটি প্রস্তুত রাখতে সহায়ক হবে। তবে অতিবৃষ্টি হলে কিছু এলাকায় রোপণকৃত বীজতলা ও সবজি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কুমিল্লার কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, “আমরা আগাম সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই বৃষ্টিটা হালকা থাকলে জমির উর্বরতা বাড়বে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশন সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
🌦️ আবহাওয়ার সামগ্রিক চিত্র
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মৌসুমি বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে আকাশ মেঘলা ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও উত্তরাঞ্চলে আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার। রাজধানী ঢাকায়ও সকালে হালকা রোদ এবং দুপুরে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা আরও এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
