আগামীকাল থেকে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথমবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ আসরের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে, যা দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে মোট ১১টি দেশ। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট ভারত ও ইরান। এছাড়া চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, কেনিয়া, নেপাল, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও জাঞ্জিবার অংশ নিচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। ২০১২ সালে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত প্রথম নারী কাবাডি বিশ্বকাপে ভারত শিরোপা জিতেছিল, রানার্সআপ হয়েছিল ইরান; সেই আসরে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ।
দুই গ্রুপে লড়বে ১১ দল
রোববার সকালে অনুষ্ঠিত ড্র অনুযায়ী ১১ দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। এ গ্রুপে পাঁচ দল এবং বি গ্রুপে ছয় দল নিয়ে হবে লড়াই।
বাংলাদেশ রয়েছে শক্তিশালী এ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও জার্মানি।
অন্যদিকে বি গ্রুপে ইরানের সঙ্গে রয়েছে নেপাল, চাইনিজ তাইপে, পোল্যান্ড, কেনিয়া এবং জাঞ্জিবার।
বাংলাদেশের জন্য গ্রুপটি কঠিন চ্যালেঞ্জের, কারণ ভারত ও থাইল্যান্ড—উভয় দলই নারী কাবাডিতে ঐতিহ্যবাহী শক্তি।
উদ্বোধনী দিনেই বাংলাদেশের মাঠে নামা
১৭ নভেম্বর টুর্নামেন্টের প্রথম দিন চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
- বেলা তিনটায় উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন উগান্ডার।
- দ্বিতীয় ম্যাচে নেপাল খেলবে জাঞ্জিবারের বিপক্ষে।
- তৃতীয় ম্যাচে নামবে ইরান, তাদের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড।
- দিনের শেষ ম্যাচে লড়বে চাইনিজ তাইপে ও কেনিয়া।
স্বাগতিকদের জন্য প্রথম ম্যাচটি মনস্তাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টের শুরুতে জয় পেলে সেটি পুরো স্কোয়াডের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ করে দেবে।
বিশ্বকাপে প্রথমবার উগান্ডা—তবুও শক্ত প্রতিপক্ষ
আফ্রিকার শক্তিশালী দল উগান্ডা এ পর্যন্ত কোনো নারী কাবাডি বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি। বাংলাদেশের আয়োজিত এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই তাদের বিশ্বকাপ অভিষেক। ‘দ্য শি গ্ল্যাডিয়েটর্স’ নামে পরিচিত উগান্ডা দল আফ্রিকান কাবাডির রাজত্ব ধরে রেখেছে।
২০২৩ সালে তারা প্রথমবারের মতো ‘আফ্রিকান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ’ জিতে আলোচনায় আসে। ২০২৫ সালেও তারা শিরোপা ধরে রেখে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে। ফলে বিশ্বকাপে প্রথমবার এলেও তারা একেবারে হালকা প্রতিপক্ষ নয়।
বাংলাদেশ অধিনায়কের আত্মবিশ্বাস
উদ্বোধনী ম্যাচকে সামনে রেখে অধিনায়ক রূপালী আক্তার বলেন,
“উগান্ডার বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচ। আমরা কঠোর অনুশীলন করেছি এবং দল মানসিকভাবে প্রস্তুত। লক্ষ্য—জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা। নিজেদের মাঠের সমর্থন আমাদের বাড়তি শক্তি দেবে।”
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি আরও বলেন,
“দলে নতুন কয়েকজন যোগ হয়েছে, যারা বেশ আত্মবিশ্বাসী। আমরা আশা করছি ভালো শুরুর মাধ্যমে পুরো টুর্নামেন্টে গতি ধরে রাখতে পারব।”
সতর্ক কোচ, কৌশলে গুরুত্ব
দলীয় কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা বলেন,
“উগান্ডা প্রথমবার খেললেও তারা আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন। প্রথম ম্যাচে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। শুরুর কয়েক মিনিট দেখে বুঝে নিতে হবে তারা কোন দিকটায় বেশি শক্তিশালী। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেললে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
তিনি আরও বলেন,
“নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আমরা চাই ভালো খেলে সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে। খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি খুবই ভালো।”
নারী কাবাডিতে বাংলাদেশের যাত্রা ও অর্জন
বাংলাদেশ নারী কাবাডি দলের আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে ভারতের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে দলটি।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন—
- এশিয়ান গেমস: ২০১০ (ব্রোঞ্জ), ২০১৪ (ব্রোঞ্জ), ২০১৮ (৭ম), ২০২২ (৬ষ্ঠ)
- দক্ষিণ এশিয়ান গেমস: ২০০৬ (ব্রোঞ্জ), ২০১০ (রৌপ্য), ২০১৬ (ব্রোঞ্জ), ২০১৯ (ব্রোঞ্জ)
- এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ: ২০০৫ (ব্রোঞ্জ), ২০২৫ (ব্রোঞ্জ)
- বিশ্বকাপ: ২০১২ (পঞ্চম)
এই অর্জনগুলো বাংলাদেশকে এবারের আসরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর অনুপ্রেরণা জোগাবে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited