বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে বহাল থাকছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান ২০২৫-২০২৭ চক্র পর্যন্ত শান্তই নেতৃত্ব দেবেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা দলকে।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এতে জানানো হয়, টেস্ট দলে নেতৃত্বে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে বোর্ড শান্তর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছে।
গত জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন শান্ত। এরপর থেকেই টেস্ট দলের নতুন অধিনায়ক নিয়ে ক্রিকেট অঙ্গনে নানা জল্পনা–কল্পনা শুরু হয়। তবে অবশেষে সেই সমস্ত গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বিসিবি শান্তকেই রাখল দেশের লংগার ভার্সনের নেতৃত্বে।
ধারাবাহিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থা
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, শান্তর নেতৃত্বে দলের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন,
“শান্ত তার ধৈর্য, প্রতিশ্রুতি ও টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি গভীর বোঝাপড়ার প্রমাণ দিয়েছে। তার অধীনে দল পরিণত, আত্মবিশ্বাসী এবং লক্ষ্যনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রেও এই নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে।”
বুলবুল আরও বলেন, বিসিবি টেস্ট ক্রিকেটে স্থিতিশীলতা ও পরিকল্পনাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। শান্তর নেতৃত্বে দলের তরুণ খেলোয়াড়রা নিজেদের বিকশিত করার যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছে।
শান্তর নেতৃত্বে সাফল্য ও পরিসংখ্যান
২০২৩ সালে প্রথমবার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান শান্ত। এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট খেলেছে—যার মধ্যে ৪টিতে জয়, ৯টিতে পরাজয় এবং ১টি ম্যাচে ড্র করেছে দল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে শান্তর নেতৃত্বকালেই সবচেয়ে বেশি তরুণ ক্রিকেটার অভিষেকের সুযোগ পেয়েছেন।
অধিনায়ক হিসেবে শান্ত নিজেও ব্যাট হাতে বেশ ধারাবাহিক ছিলেন। তার নেতৃত্বে দলের টপ অর্ডারে স্থিতি এসেছে, পাশাপাশি ফিল্ডিং এবং বোলিং ইউনিটেও দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসের ছাপ।
দায়িত্ব পেয়ে কৃতজ্ঞ শান্ত
অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে বহাল থাকার খবর জানার পর নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন,
“বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। বোর্ড আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এই দায়িত্বের প্রতিদান দিতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
তিনি আরও বলেন,
“আমাদের দলটি তরুণ ও প্রতিভাবান। এই দলের নেতৃত্ব দেওয়া আনন্দের এবং চ্যালেঞ্জিংও বটে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে টেস্ট ক্রিকেটে আরও উন্নতি করব। সামনে গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌসুম শুরু হচ্ছে, আর আমি সেটির জন্য ভীষণভাবে উদগ্রীব।”
সামনে ব্যস্ত সময়
বাংলাদেশ দল চলতি মাসেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে। এরপর বছরজুড়ে রয়েছে জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দীর্ঘ ফরম্যাটের সিরিজ। সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আসন্ন সময়টি বাংলাদেশের জন্য হতে যাচ্ছে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
বিসিবি আশা করছে, শান্তর নেতৃত্বে দল শুধু পারফরম্যান্সেই নয়, মানসিক দৃঢ়তাতেও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শান্তর শান্ত স্বভাব, কৌশলগত ধৈর্য ও ব্যাটিং পারফরম্যান্স তাকে টেস্ট দলের উপযুক্ত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও মাঝে কিছু সমালোচনা ছিল—অধিনায়কত্বের চাপে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে কি না তা নিয়ে—তবুও বিসিবির আস্থা টলে যায়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় টেস্ট ফরম্যাটকে শক্তিশালী করতে বিসিবির এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই দেখছেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট এখন নতুন চক্রে প্রবেশ করছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে। সামনে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনি সুযোগও রয়েছে নিজেদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আরও প্রতিযোগিতামূলক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। শান্ত নিজে বলছেন—“এখন সময় শুধু উন্নতির, পিছনে তাকানোর নয়।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited