চট্টগ্রামের আলো–আধারিতে রাঙা সোমবারের রাত শেষ হলো হতাশায়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বাসের শুরু হলেও শেষটা হলো ক্যারিবীয় উল্লাসে। সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টিতে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ১৬ রানে হারিয়ে দাপুটে সূচনা করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ব্যাটিংয়ে ধীর সূচনা, মাঝপথে ব্যাটিং ধস আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে ১৬৬ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার পথেই বারবার হোঁচট খেল লিটন দাসের দল। ইনিংস শেষ হলো ১৪৯ রানে, হাতে তখন আর কোনো উইকেট নেই, কেবল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ।
ভালো শুরু, হঠাৎ ভেঙে পড়া
লক্ষ্যটা অসম্ভব ছিল না—১৬৬ রান, টি–টোয়েন্টিতে যে কোনো সময়ই তাড়া করার মতো। শুরুটাও ছিল ঝড়ো। ওপেনার তানজিদ হাসান পাঁচ বলে ১৫ রান তুলে ঝলক দেখান। কিন্তু তাঁর বিদায়ের পর যেন কুয়াশা নেমে আসে বাংলাদেশের ইনিংসে।
লিটন দাস (৫), সাইফ হাসান (৮) ও শামীম হোসেন (১) ফিরলেন তড়িঘড়ি করে। প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যেই বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট। স্কোরবোর্ডে তখন চাপের ছাপ স্পষ্ট। এক প্রান্তে থেকে হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন তাওহীদ হৃদয় (২৮) ও তানজিম হাসান সাকিব (৩৩)। দুজনই কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও তা যথেষ্ট হয়নি ম্যাচে ফেরার জন্য।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার রোমারিও শেফার্ড ও ওবেড ম্যাককয় বাংলাদেশ ব্যাটারদের কাঁপিয়ে দেন গতির ভেল্কিতে। শেফার্ডের শর্টপিচ বল সামলাতে গিয়ে বারবার সমস্যায় পড়েছেন লিটনসহ শীর্ষক্রমের ব্যাটাররা।
শেষদিকে নাসুম আহমেদের ২০ রানের ছোট্ট ইনিংস কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও তা কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৯, জয় পায় ক্যারিবীয়রা ১৬ রানে।
ক্যারিবীয়দের নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্ধারিত ২০ ওভারে তোলে ১৬৫ রান, হারায় ৬ উইকেট। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রান আসে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ব্যাট থেকে। তিনটি ছক্কা ও চারটি চারে সাজানো তাঁর ইনিংসটাই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের মেরুদণ্ড।
তাছাড়া নিকোলাস পুরান খেলেন ৩১ রানের ইনিংস, আর শেষদিকে শিমরন হেটমায়ারের ২১ রানের ঝলক ক্যারিবীয়দের স্কোরকে টেনে তোলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ উচ্চতায়।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সেরা ছিলেন তানজিম হাসান সাকিব, ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন পেয়েছেন একটি করে উইকেট। যদিও মাঝে মাঝে স্পিনারদের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় ১৫-২০ রান বেশি গুনতে হয়েছে স্বাগতিকদের।
লিটনের কণ্ঠে আত্মসমালোচনা
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন দাস বলেন,
“আমরা ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুটা ধরে রাখতে পারিনি। কয়েকটা দ্রুত উইকেট আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। মাঝের ওভারে পার্টনারশিপ গড়তে পারলে ফল অন্যরকম হতে পারত।”
তিনি আরও বলেন, “দলের অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে, তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে পরের ম্যাচে ভালো কিছু করব।”
অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল বলেন,
“চট্টগ্রামে আমরা সব সময় দারুণ পরিবেশ পাই। আজ দলের প্রতিটি বিভাগই ভালো পারফর্ম করেছে। বোলাররা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় জয়ের ভিত্তিটা তৈরি হয়।”
সিরিজে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা
এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায়। সিরিজে টিকে থাকতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই লিটনদের সামনে।
বাংলাদেশ দলের কোচ চ্যান্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন,
“এটা কেবল শুরু। আমরা জানি আমাদের সামর্থ্য আছে। প্রথম ম্যাচে কিছু ভুল হয়েছে, সেগুলো ঠিক করেই পরের ম্যাচে ফিরতে হবে।”
চট্টগ্রামের রাত শেষে তাই বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে নেমেছে হতাশা, আর ক্যারিবীয় শিবিরে আনন্দের উচ্ছ্বাস। এখন অপেক্ষা, ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না টাইগাররা।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited