শেষ ম্যাচে যেন একদম ভিন্ন চেহারার ভারত। সিরিজে পিছিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাস হারায়নি রোহিত শর্মার দল। সিডনিতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৯ উইকেটে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল ভারত।
এই জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান — দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।
রোহিতের ব্যাট থেকে আসে ১২৫ বলে ১২১ রানের অনবদ্য ইনিংস, আর কোহলি অপরাজিত থাকেন ৮১ বলে ৭৪ রানে। তাদের দুর্দান্ত জুটিতেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয় ৯ উইকেটে, হাতে থাকে ৬ ওভার।
চাপের পরই নিজের সেরাটা দেখান কোহলি
প্রথম দুই ম্যাচে রানের দেখা না পাওয়া বিরাট কোহলি ছিলেন প্রচণ্ড চাপে। অস্ট্রেলিয়ার কড়া বোলিংয়ের সামনে একদমই ছন্দে ছিলেন না তিনি। তবে ক্রিকেট দুনিয়া জানে, কোহলির মতো মানসিকভাবে শক্ত ব্যাটসম্যানকে বেশিদিন চুপ করিয়ে রাখা যায় না।
ম্যাচ শেষে কোহলি সাংবাদিকদের বলেন,
“এই খেলাটা আমাকে প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখায়। আমি প্রায় ৩৭ হতে চলেছি, তবুও রান তাড়া করাটা আমার মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনে। কঠিন সময় খেলাটাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে, আর কঠিন পরিস্থিতিই আমার সেরাটা প্রকাশ করে।”
তার কথার মধ্যেই ফুটে উঠেছে আত্মবিশ্বাস, পরিণত ব্যাটসম্যানের মানসিক দৃঢ়তা ও ক্রিকেটবোধ।
রোহিত–কোহলি জুটি: দশকের সেরা এক অধ্যায়
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে রোহিত-কোহলি জুটি এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরেই শুরু হয়েছিল তাদের সফল জুটির গল্প। সেই গল্পের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত।
সিডনির ম্যাচে দুইজন গড়েন ১৮২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
কোহলি বলেন,
“রোহিতের সঙ্গে ব্যাট করতে আমার সবসময়ই স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। আমরা জানি, একসঙ্গে ২০ ওভার খেলতে পারলে বড় কিছু করা সম্ভব। বিপক্ষও জানে, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকলে ম্যাচ শেষ করাও সম্ভব।”
এই জুটিতে ভারতের জয় এসেছে অনেকবার। শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানসিকভাবেও দুই তারকা একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন। রোহিতের স্থিরতা আর কোহলির আগ্রাসন—এই দুই মেলবন্ধনই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা।
সিরিজের প্রেক্ষাপটে জয়টির তাৎপর্য
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভুগেছিল ভারত। টপ অর্ডারে ধারাবাহিক রান না পাওয়ায় দলে চাপ তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে কোহলির টানা দুই ম্যাচে ‘ডাক’ (০ রান) করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনাও হয়।
তবে শেষ ম্যাচে সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এই দুজন সিনিয়র ব্যাটার। কোহলি ও রোহিতের ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে সেই পুরোনো ভারত—আত্মবিশ্বাসী, নিয়ন্ত্রিত ও ধৈর্যশীল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় শুধু সিরিজ বাঁচানোর নয়, বরং দলের মানসিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।
সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন,
“চাপের মুহূর্তে কোহলি যেভাবে ফিরে এল, সেটাই তার বড়ত্বের প্রমাণ। রোহিতও দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছে। এই পারফরম্যান্স দলকে পরের সিরিজে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে।”
অভিজ্ঞতার ছোঁয়ায় দল ফিরে পেল ছন্দ
ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যর্থতার পরও কোহলিকে একাদশে রাখার সিদ্ধান্ত ছিল পুরোপুরি আস্থার জায়গা থেকে।
কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেন,
“বিরাট এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি যত বেশি চাপের মধ্যে থাকেন, ততই ভালো খেলেন। আমরা জানতাম, তিনি ফিরে আসবেন। আজ সেটাই দেখলাম।”
কোহলি ও রোহিতের ইনিংস ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ছিল বোলারদের শৃঙ্খলাপূর্ণ বোলিং। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়। ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজ নেন ৩ উইকেট, স্পিনার কুলদীপ যাদব নেন ২ উইকেট।
আগামী লক্ষ্য: নিউজিল্যান্ড সফর
এই সিরিজের পর ভারতীয় দল সরাসরি নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে, যেখানে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কোহলি ও রোহিত দুজনকেই বিশ্রাম না দিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা আছে, যাতে আসন্ন টেস্টে ব্যাটিং লাইনআপ আরও অভিজ্ঞ হয়।
সিডনির জয়ের পর কোহলি বলেছেন,
“এই জয়টা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা চাই এই ধারা নিউজিল্যান্ডেও ধরে রাখতে।”
এক চেনা কোহলির প্রত্যাবর্তন
দুই ম্যাচ ব্যর্থতার পর সিডনিতে যেন পুরনো কোহলিকে দেখা গেল—চোখে আগুন, ব্যাটে আগ্রাসন, আর মুখে একটাই বার্তা:
“কঠিন সময়ই আমার সেরা শিক্ষক।”
আর সেই শিক্ষাই তাকে বারবার ফিরিয়ে আনে—ভারতের জয়গাথার কেন্দ্রে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited