বিশ্ব ফুটবলে এখনও রাজত্ব করছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। বয়সের দিক থেকে পেশাদার জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও আয়ের দিক থেকে এখনও তিনি অপ্রতিরোধ্য। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস প্রকাশিত ২০২৫–২৬ মৌসুমের বার্ষিক র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, আবারও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের ফুটবলার হয়েছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি।
চলতি মৌসুমে মাঠ ও মাঠের বাইরে সব মিলিয়ে রোনাল্ডোর আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার বেশি। এ নিয়ে গত এক দশকে ষষ্ঠবারের মতো ফোর্বস–এর শীর্ষস্থান দখল করলেন ৪০ বছর বয়সী এই তারকা।
সৌদি আরবে রোনাল্ডোর রাজত্ব
২০২২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসর–এ যোগ দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। গত জুনে তিনি ক্লাবটির সঙ্গে আরও দুই বছরের নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। নতুন এই চুক্তির আওতায় মাঠের পারফরম্যান্স, বোনাস ও ক্লাব–ভিত্তিক ইমেজ রাইটসসহ মোট আয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন ডলার, আর মাঠের বাইরে বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড–চুক্তি থেকে আয় ৫০ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বজুড়ে রোনাল্ডোর জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করা যায় তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনুসারীর সংখ্যা— যা ইতিমধ্যে ১ বিলিয়নেরও বেশি ছুঁয়েছে। ফোর্বস–এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই বিপুল অনলাইন প্রভাবই তাঁকে বারবার সর্বোচ্চ আয়ের তালিকার শীর্ষে রেখেছে।
মেসি দ্বিতীয়, যুক্তরাষ্ট্রে উজ্জ্বল উপস্থিতি
রোনাল্ডোর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। বর্তমানে তিনি খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার ক্লাব ইন্টার মিয়ামি–তে। মাঠ থেকে তাঁর আয় ৬০ মিলিয়ন ডলার এবং মাঠের বাইরে পৃষ্ঠপোষকতা, বিজ্ঞাপন ও ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে আরও ৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।
সব মিলিয়ে মেসির বার্ষিক আয় ১৩০ মিলিয়ন ডলার, যা রোনাল্ডোর আয়ের প্রায় অর্ধেক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে এটি রেকর্ড পরিমাণ। এডিডাস, লে’স, মাস্টারকার্ডসহ একাধিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে।
শীর্ষ দশে সৌদি ক্লাবগুলোর আধিপত্য
তৃতীয় স্থানে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকা করিম বেনজেমা, যিনি বর্তমানে সৌদি ক্লাব আল ইত্তিহাদ–এর অধিনায়ক। তাঁর বার্ষিক আয় ১০৪ মিলিয়ন ডলার।
সৌদি প্রো লিগের আরও এক তারকা, রোনাল্ডোর ক্লাব–সতীর্থ সাদিও মানে, ৫৪ মিলিয়ন ডলার আয় করে তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবলে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের ফলে এবার শীর্ষ দশে তিনজন সৌদি লিগ খেলোয়াড় জায়গা করে নিয়েছেন।
ইউরোপীয় তারকাদের আধিপত্য
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে—রিয়াল মাদ্রিদে সদ্য যোগ দেওয়া ফরাসি সুপারস্টার। মাঠের আয় ৭০ মিলিয়ন, মাঠের বাইরে ২৫ মিলিয়ন ডলার, মোট আয় ৯৫ মিলিয়ন ডলার।
প্রিমিয়ার লিগ থেকে দুই খেলোয়াড় স্থান পেয়েছেন—ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হালান্ড (৮০ মিলিয়ন ডলার) ও লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ (৫৫ মিলিয়ন ডলার)। হালান্ড পাঁচ নম্বরে, সালাহ সপ্তম স্থানে।
লা লিগা থেকেও চারজনের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। রিয়ালের ভিনিসিয়াস জুনিয়র (৬০ মিলিয়ন, ষষ্ঠ), জুড বেলিংহাম (৪৪ মিলিয়ন, নবম) এবং সর্বকনিষ্ঠ সংযোজন লামিন ইয়ামাল (৪৩ মিলিয়ন, দশম) এই তালিকায় রয়েছেন।
ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ধনকুবের ফুটবলার
১৮ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল এবার ফোর্বস তালিকার ২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। বার্সেলোনার এই তরুণ উইঙ্গার গত মে মাসে ক্লাবটির সঙ্গে ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেন। তাঁর মাঠের আয় ৩৩ মিলিয়ন ডলার, মাঠের বাইরে ১০ মিলিয়ন ডলার।
ফোর্বস তালিকা: মোট আয় কমেছে ৪ শতাংশ
ফোর্বসের হিসাবে, বিশ্বের শীর্ষ দশ ফুটবলারের সম্মিলিত আয় ৯৪৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ কম। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নেইমারের ইউরোপ ছাড়ার পর বাণিজ্যিক চুক্তির সংখ্যা কমে যাওয়া এবং ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর বেতন কাঠামোয় নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপ।
গত বছর তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়র এ বছর শীর্ষ দশ থেকে বাদ পড়েছেন, কারণ তিনি আল হিলাল ছেড়ে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে যোগ দিয়েছেন।
ফোর্বসের ২০২৫ সালের সর্বোচ্চ আয়ের ১০ ফুটবলার
১️⃣ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো — ২৮০ মিলিয়ন ডলার
২️⃣ লিওনেল মেসি — ১৩০ মিলিয়ন ডলার
৩️⃣ করিম বেনজেমা — ১০৪ মিলিয়ন ডলার
৪️⃣ কিলিয়ান এমবাপ্পে — ৯৫ মিলিয়ন ডলার
৫️⃣ আর্লিং হালান্ড — ৮০ মিলিয়ন ডলার
৬️⃣ ভিনিসিয়াস জুনিয়র — ৬০ মিলিয়ন ডলার
৭️⃣ মোহাম্মদ সালাহ — ৫৫ মিলিয়ন ডলার
৮️⃣ সাদিও মানে — ৫৪ মিলিয়ন ডলার
৯️⃣ জুড বেলিংহাম — ৪৪ মিলিয়ন ডলার
🔟 লামিন ইয়ামাল — ৪৩ মিলিয়ন ডলার
