আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের কাছে ৮১ রানে হার স্বীকার করতে হয়েছে টাইগারদের। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের পরাজয়ের পর এই হার নিশ্চিত করেছে সিরিজ হার—ফলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে এখন কেবল মর্যাদা রক্ষার লড়াই বাকি।
এই সিরিজ হারের প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সোজাসাপ্টা স্বীকার করেছেন, দলের ব্যাটাররা দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে পারেননি, যা আফগানদের বিপক্ষে পরাজয়ের মূল কারণ।
বোলিং ভালো, কিন্তু ব্যাটিংয়ে ধস
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পুরো ৪৪.৫ ওভার ব্যাট করে ১৯০ রানে অলআউট হয় আফগানরা। বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন অধিনায়ক মিরাজ নিজেই—তিনি নেন ৩ উইকেট মাত্র ৪২ রানে। তার সঙ্গে শরিফুল ইসলাম ও তানজিম সাকিবও তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
তবে লক্ষ্যটা খুব বড় না হলেও ব্যাট হাতে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। ২৮.৩ ওভারে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হয় দল। শেষ ৩০ রানে হারায় ৬ উইকেট—যা একদিনের ক্রিকেটে ভয়াবহ ধস।
দলের হয়ে দুই অঙ্কে পৌঁছানো ব্যাটারদের তালিকা ছোট: তাওহিদ হৃদয় ২৪, সাইফ হাসান ২২, জাকের আলি ১৮ এবং নুরুল হাসান ১৫ রান করেন। বাকি সাত ব্যাটার কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি।
“দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং আমাদের ডুবিয়েছে”—মিরাজ
ম্যাচ শেষে হতাশ কণ্ঠে মিরাজ বলেন,
“আমাদের বোলাররা সত্যিই ভালো করেছে। ১৯০ রানে আফগান দলকে থামানোটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ব্যাট হাতে আমরা একদমই দায়িত্ব নিতে পারিনি। এমন ব্যাটিংয়ে জেতা সম্ভব নয়। ব্যাটাররা কেউই ইনিংস বড় করতে পারেনি। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
অধিনায়কের মতে, ম্যাচের শুরু থেকেই ব্যাটারদের মনোযোগে ঘাটতি ছিল। “আমরা জানতাম পিচে কিছুটা সহায়তা থাকবে বোলারদের জন্য, কিন্তু সেটি কোনো অজুহাত হতে পারে না। প্রতিপক্ষের বোলারদের আমরা সহজেই উইকেট উপহার দিয়েছি,” বলেন তিনি।
বড় জুটির অভাবই মূল পার্থক্য
বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় জুটি ছিল মাত্র ২৯ রানের, যা আসে পঞ্চম উইকেটে হৃদয় ও জাকের আলির মধ্যে। এই জুটির পর ধস নামে দলজুড়ে।
মিরাজ বলেন,
“টপ অর্ডারে যদি দুই-একটা বড় জুটি গড়া যেত, তাহলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু কেউই সেট হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেনি। এক প্রান্তে ব্যাটার থেকে গেলে ম্যাচটা অনেক সহজ হতো।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা খেলতে পারিনি। আমাদের ব্যাটারদের আরও মনোযোগী হতে হবে, বিশেষ করে মাঝের ওভারে রোটেশন ধরে রাখা খুব জরুরি।”
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
সিরিজ হার সত্ত্বেও হাল ছাড়তে রাজি নন মিরাজ। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে দল ঘুরে দাঁড়াবে—এমন আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন তিনি।
“আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য—শেষ ম্যাচে জয় পেয়ে সিরিজ শেষ করা। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে। ব্যাটারদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে, টপ অর্ডারে ভালো শুরু দরকার।”
অধিনায়ক বলেন, আগামী ম্যাচে দল কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডারে। “আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই। যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলো বিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে।”
সিরিজের শেষ ম্যাচ ১৪ অক্টোবর
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ অক্টোবর, একই ভেন্যু আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই টাইগারদের সামনে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশা, দলটি যেন ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে প্রতিপক্ষকে জবাব দিতে পারে—আর মিরাজ যেন নেতৃত্বে নতুন উদ্যম খুঁজে পান, যা আগামীর জন্য আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করবে।
