বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ভোট গ্রহণ শেষে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এর সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত আরও দুই পরিচালক যোগ হওয়ায় পরিচালকের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫।
এদের মধ্য থেকেই আগামী চার বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন বিসিবির সভাপতি ও সহ-সভাপতি।
রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনের পরিচিত মুখদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ক্যাটাগরি-১: জেলা ও বিভাগ প্রতিনিধি
জেলা ও বিভাগ কোটায় নির্বাচিত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রিকেট সংগঠক ও সাবেক খেলোয়াড়েরা।
চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আহসান ইকবাল চৌধুরি ও আসিফ আকবর। খুলনা অঞ্চল থেকে জয় পেয়েছেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক রাজ এবং সংগঠক জুলফিকার আলী খান।
ঢাকা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিসিবির সাবেক কোচিং ডিরেক্টর নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
বরিশাল অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন, সিলেট অঞ্চল থেকে রাহাত শামস, রাজশাহী অঞ্চল থেকে মোখলেসুর রহমান, এবং রংপুর অঞ্চল থেকে হাসানুজ্জামান।
এই বিভাগগুলো থেকে নির্বাচিত পরিচালকরা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো ও জেলা পর্যায়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্যাটাগরি-২: ঢাকার ক্লাব প্রতিনিধিদের ভোটে জয়ী ১২ জন
ঢাকা মহানগরীর ক্লাব কোটায় ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সবচেয়ে জমজমাট।
এই ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন— ইশতিয়াক সাদেক, শানিয়ান তানিম, মেহরাব আলম চৌধুরী, ফারুক আহমেদ, আমজাদ হোসেন, মোকসেদুল কামাল, মঞ্জুরুল আলম, আদনান রহমান দিপন, আবুল বাশার শিপলু, ইফতেখার রহমান মিঠু, ফয়জুর রহমান এবং নাজমুল ইসলাম।
তাদের বেশিরভাগই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত, কেউ কেউ আবার দেশের শীর্ষ ক্রিকেট ক্লাবগুলোর পরিচালক বা সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্যাটাগরির পরিচালকরা দেশের অভ্যন্তরীণ লিগ কাঠামো, খেলোয়াড় উন্নয়ন এবং ক্লাব সংস্কৃতিতে প্রভাব রাখেন।
ক্যাটাগরি-৩: সাবেক ক্রিকেটার ও সরকারি কোটায় একমাত্র পাইলট
সাবেক ক্রিকেটার ও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোটা থেকে এবার নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও জনপ্রিয় ক্রিকেট বিশ্লেষক খালেদ মাসুদ পাইলট।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির বিভিন্ন কমিটিতে কাজ করেছেন এবং এবার সরাসরি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।
পাইলটের অন্তর্ভুক্তি ক্রিকেট বোর্ডে খেলোয়াড়দের দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এনএসসি মনোনয়ন: যোগ হলেন আরও দুই পরিচালক
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে মনোনীত হয়েছেন দুইজন— এম ইসফাক আহসান এবং ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিক।
তারা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বোর্ডের নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
সামনে সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন
এই ২৫ জন পরিচালকই এখন বিসিবির শীর্ষ দুই পদ—সভাপতি ও সহ-সভাপতি—নির্বাচনে ভোট দেবেন।
আইন অনুযায়ী, বোর্ড সভায় গোপন ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবেন, যার মেয়াদ হবে চার বছর।
বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আবারও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।
বিসিবি নির্বাচনের গুরুত্ব
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক পরিচালনা, বাজেট অনুমোদন, ঘরোয়া লিগের সময়সূচি, কোচ নিয়োগ থেকে শুরু করে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—সব কিছুই নির্ধারিত হয় এই পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে।
তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে সবসময়ই থাকে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনার ঝড়।
