চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে আবারও প্রমাণ করল রিয়াল মাদ্রিদ কেন তারা ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল। কাজাখস্তানের নবাগত ক্লাব কাইরাতকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে রেকর্ড ১৫ বারের ইউরোপসেরা দলটি। দলের আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা কিলিয়ান এমবাপ্পে করেছেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। বাকি দুই গোলের অবদান রাখেন এডুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ও ব্রাহিম দিয়াজ।
হার থেকে জয়ের প্রত্যাবর্তন
গত সপ্তাহে লা লিগায় নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে সমালোচনার মুখে পড়ে জাবি আলোসনোর শিষ্যরা। পরাজয়ের সেই হতাশা ঝেড়ে ফেলে এবার ইউরোপীয় আসরে নিজেদের নতুন করে মেলে ধরতে চেয়েছিল রিয়াল। তার ওপর প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আলমাতি শহরে গিয়ে খেলতে হয়েছিল অচেনা প্রতিপক্ষ কাইরাতের বিপক্ষে। তবে মাঠে নামার পরই স্পষ্ট হয়ে যায়, অভিজ্ঞতা ও শক্তিমত্তার ব্যবধান কতটা প্রকট।
এমবাপ্পের অবিশ্বাস্য রাত
ম্যাচের ২৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। কাইরাতের তরুণ গোলরক্ষক শেরখান কালমুরজাকে ভুল দিকে পাঠিয়ে তিনি সহজেই বল জালে জড়ান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে (৫২ মিনিটে) থিবো কুর্তোয়ার লম্বা কিক থেকে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এই ফরাসি তারকা। আর ৭০ মিনিটে আরডা গুলারের নিখুঁত পাস থেকে পূর্ণ করেন নিজের হ্যাটট্রিক।
চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইতোমধ্যে ১৩ গোল হয়ে গেল এমবাপ্পের। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন,
“আতলেতিকোর বিপক্ষে যা ঘটেছে তা আমরা ভোলিনি। সেটাই আমাদের আরও দৃঢ় করেছে। প্রতিদিনই আমরা নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা করি। আমরা চাই না এমন রাত আর ফিরে আসুক।”
নবাগত কাইরাতের সীমাবদ্ধতা
ইউরোপীয়ান ফুটবলের নতুন অতিথি কাইরাত সেল্টিককে বাছাইপর্বে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু লস ব্ল্যাঙ্কোসদের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সামলানো তাদের জন্য সহজ ছিল না।
প্রথম একাদশে নামতে হয়নি দলের প্রথম তিন গোলরক্ষককে। ফলে মাত্র ১৮ বছর বয়সী কালমুরজার ওপর ভরসা করতে হয় কাইরাতকে। ম্যাচের শুরুতে তিনি এমবাপ্পের একটি শট ঠেকালেও পরে আর কিছু করার ছিল না।
তবে কাইরাতের তরুণ প্রতিভা ১৭ বছর বয়সী ডাস্টান সাটপায়েভ একবার ফ্রি-কিক থেকে গোল পেতে পারতেন। অল্পের জন্য বল পোস্টের বাইরে চলে যায়। আগামী মৌসুমে এই প্রতিভাবান ফরোয়ার্ডের ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ম্যাচের বাকি গল্প
৮৩ মিনিটে বদলি নামা এডুয়ার্দো কামাভিঙ্গা তৃতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়ান। যোগ করা সময়ে ব্রাহিম দিয়াজ গোল করলে ৫-০ তে বড় জয় নিশ্চিত করে রিয়াল।
ভিএআর–এর সিদ্ধান্তে একবার পেনাল্টির দাবি বাতিল হওয়ায় কাইরাত কিছুটা হতাশ হলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সামর্থ্য দেখা যায়নি।
গ্রুপ পরিসংখ্যান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই জয়ে দুই ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে গ্রুপ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শীর্ষস্থান ধরে রাখার জন্য সামনে আরও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে স্প্যানিশ জায়ান্টদের। অন্যদিকে, এখনো কোনো পয়েন্ট না পাওয়া কাইরাতের জন্য ইউরোপীয় যাত্রা কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ল শুরুতেই।
রিয়ালের শক্তির বার্তা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ প্রায় প্রতি মৌসুমেই নিজেদের শক্তিমত্তা প্রমাণ করে। এবারের মৌসুমেও এমবাপ্পের নেতৃত্বে আক্রমণভাগ আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে তিনি কেবল জয়ই নিশ্চিত করেননি, বরং ইউরোপসেরা হওয়ার স্বপ্নের পথে রিয়ালের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পারফরম্যান্সই ইঙ্গিত দিচ্ছে কেন রিয়াল মাদ্রিদ এখনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বড় হুমকি।
