পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, সরকার সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে পালনের জন্য সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কঠিন চীবর দান উৎসব কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি শান্তি, সম্প্রীতি ও গণতন্ত্রের বার্তা বহন করে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে আয়োজিত শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ধর্মীয় সম্প্রীতিই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি’
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন,
“বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেখানে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। সরকার প্রত্যেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যথাযথ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করে আসছে। ধর্মীয় সম্প্রীতিই জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি।”
তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এই উৎসবটি শুধুমাত্র দান বা পূজা নয়, এটি মানবিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতিফলন। কঠিন চীবর দান উৎসব মানুষকে সহনশীলতা ও মৈত্রীর শিক্ষা দেয়, যা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন,
“সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনাদের সবার দায়িত্বশীল সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।”
তিনি মনে করেন, ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখলে নির্বাচনকালীন সময়েও সমাজে স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাস বজায় থাকবে।
জাতীয় পর্যায়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য
উপদেষ্টা আরও বলেন,
“জাতীয় অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়। এই আয়োজন বৌদ্ধদের ঐতিহ্যবাহী কঠিন চীবর দানকে জাতীয়ভাবে নতুন মাত্রা ও তাৎপর্য দেবে এবং বাংলাদেশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিকট এটি সমাদৃত হবে।”
দিনব্যাপী আয়োজনে দেশজুড়ে আগত ভিক্ষু, উপাসক-উপাসিকাসহ অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অংশ নেন। ধর্মীয় আচার শেষে ভিক্ষুরা ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন, যেখানে শান্তি, করুণা ও সহমর্মিতার বার্তা উচ্চারিত হয়।
বক্তাদের উপস্থিতি ও অনুষ্ঠান পরিবেশ
পবিত্র কঠিন চীবর দান ও বৌদ্ধ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথের।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—
বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি ভদন্ত জ্ঞানানন্দ মহাথের,
উপ সংঘনায়ক রতনশ্রী মহাথের,
মিরপুর শাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের,
এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমাসহ দেশের বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষু, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও অতিথিবৃন্দ।
পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে শান্ত, সুশৃঙ্খল ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করে। উপস্থিত ভিক্ষু ও ভক্তরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন।
ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীকী আয়োজন
এই ঐতিহাসিক কঠিন চীবর দান উৎসবকে সরকার ও ধর্মীয় নেতারা একে অপরের সঙ্গে সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের মৈত্রী ও করুণার শিক্ষা সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ দেখায়।
সরকারি প্রতিনিধি, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সাধারণ উপাসকদের উপস্থিতিতে এ আয়োজন পরিণত হয় এক অনন্য মিলনমেলায়—যেখানে ধর্মের সীমারেখা পেরিয়ে দেখা মেলে মানবতার বন্ধন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited