জাতীয় নির্বাচনের পরেই এবারের তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে নির্বাচন প্রস্তুতিতে নিয়োজিত, তাই নির্বাচনের আগে ইজতেমা আয়োজন সম্ভব নয়। দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দও এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।”
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মুরুব্বিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নির্বাচনের আগে নয়, পরে সুবিধাজনক সময়ে ইজতেমা
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। আমরা আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এবারের বিশ্ব ইজতেমা নির্বাচনের পরে অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তাহলে রমজান মাসের আগে ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ সীমিত। তাই নির্বাচনের পর সুবিধাজনক সময়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।”
ড. খালিদ হোসেন জানান, “উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা শোনার পর আমরা একমত হয়েছি—ইলেকশনের আগে ইজতেমা না করাই যুক্তিযুক্ত। নির্বাচন শেষে উভয় পক্ষ বসে আলোচনার মাধ্যমে তারিখ নির্ধারণ করবে।”
‘দুই পক্ষই সম্মত, আলাদা করে ইজতেমা হবে’
তাবলীগ জামাতের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে একসঙ্গে ইজতেমা আয়োজনের এখনো সুযোগ তৈরি হয়নি। তাই তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় আলাদা আলাদাভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি জানান, তিনজন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আজকের বৈঠকে দুই পক্ষই নির্বাচনের পরে ইজতেমা আয়োজনের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।
“উভয় গ্রুপের প্রতিনিধিরা বলেছেন—নির্বাচন আগে শেষ হোক, তারপর যেন নির্বিঘ্ন পরিবেশে আধ্যাত্মিক এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা যায়,” বলেন ড. খালিদ।
নির্বাচন পিছলে গেলে কী হবে?
নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায়, তাহলে ইজতেমার তারিখও কি পরিবর্তিত হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “এ মুহূর্তে নির্বাচনের পিছিয়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।”
তিনি যোগ করেন, “তাবলীগের মুরুব্বিরা নিজেরাও বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা বাস্তবসম্মত নয়। নির্বাচন শেষ হলেই আমরা সবাই মিলে বসে তারিখ নির্ধারণ করব।”
প্রেক্ষাপট: বিশ্ব ইজতেমা ও এর তাৎপর্য
বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হিসেবে পরিচিত, যা প্রতিবছর গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। লাখো মুসল্লি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেন এই বার্ষিক আধ্যাত্মিক সমাবেশে।
তবে তাবলীগ জামাতের দুটি গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে আলাদা আলাদাভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতি বছর দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ করে থাকে।
শান্তিপূর্ণ আয়োজনের প্রত্যাশা
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “তাবলীগ জামাতের ইজতেমা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমরা চাই এটি যেন শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের পর দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তাবলীগের উভয় গ্রুপই তাদের নিজ নিজ তারিখে ইজতেমা আয়োজন করবে। আশা করি, এ বছরও লাখো মুসল্লির দোয়া ও ইবাদতে পরিপূর্ণ হবে টঙ্গীর ময়দান।”
প্রধান উপদেষ্টার ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বলেন, “তাবলীগের মুরুব্বিরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন। তারা বুঝেছেন, নির্বাচন ও ইজতেমা একসঙ্গে আয়োজন করা কঠিন। নির্বাচনের পর আমরা একসঙ্গে বসে তারিখ চূড়ান্ত করব।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “ইনশা আল্লাহ, নির্বাচনের পরই বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited