বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার বিকাশ ও ঐতিহ্যে ঢাকার বকশিবাজারের সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অবদান অসামান্য—এ কথা উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “আমি নিজেও একজন মাদ্রাসার ছাত্র। তাই গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়ও অনন্য।”
বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর বকশিবাজারে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঐতিহ্যের শেকড় গভীরে
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসার মতো আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেই। এই মাদ্রাসা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসসহ অসংখ্য আলেম-ওলামা, বিশিষ্ট শিক্ষক, গবেষক ও চিন্তাবিদ বের হয়েছেন। তাদের অবদান আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, এই উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা না থাকলে ইসলামের ঐতিহ্য, আদর্শ ও তমুদ্দিন রক্ষা করা সম্ভব হতো না। “মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলামের জ্ঞানচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, এই ঐতিহ্য শত শত বছরের।”
সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে মাদ্রাসার ভূমিকা
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “আজকের দিনে যখন সমাজে নানা ধরনের মূল্যবোধের সংকট দেখা দিচ্ছে, তখন মাদ্রাসা শিক্ষা আমাদের সামনে আলোর পথ দেখাতে পারে। সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় মাদ্রাসার বিকল্প নেই। এখানকার ছাত্ররা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, সততা ও মানবিকতার শিক্ষা অর্জন করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।”
তিনি উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের ওপর দায়িত্ব আছে সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর। নিজেদের শিক্ষাকে শুধু ব্যক্তিগত জীবনের সাফল্যের জন্য নয়, জাতির কল্যাণের জন্য কাজে লাগাতে হবে।”
মাদ্রাসা হলো আলেম-ওলামা তৈরির কারখানা
অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “মাদ্রাসা হল আলেম-ওলামা তৈরির কারখানা। যুগে যুগে এখান থেকে এমন আলেম বের হয়েছেন, যারা ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও সামাজিক নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ভবিষ্যতেও মাদ্রাসাগুলো থেকে প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন আলেম বের হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সমসাময়িক জ্ঞানচর্চার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় ঘটালে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে হবে। তবেই তারা জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে এবং দেশের নেতৃত্বে আসীন হতে পারবে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান, তোমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশকে আরও এগিয়ে নেবে।”
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কেবল বইয়ের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, সমাজে গিয়ে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই মাদ্রাসার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে।
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ধর্ম উপদেষ্টা এ সময় মাদ্রাসা শিক্ষার ঐতিহ্য ধরে রেখে তাকে আধুনিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বে জ্ঞানের ক্ষেত্র বিস্তৃত। কেবল কওমি বা আলিয়া শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ইংরেজি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। তাহলেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।”
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়; বরং একটি আন্দোলনের নাম। এখানে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা যুগে যুগে জাতি, সমাজ ও ধর্মের জন্য অমূল্য অবদান রেখেছেন। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের মতে, এ ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। আর সেটি করতে পারলেই মাদ্রাসা শিক্ষা কেবল অতীতের গৌরব নয়, ভবিষ্যতেরও আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে।
