গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলমান সংকট কাটিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন ছাড়া গণতন্ত্রে ফেরার আর কোনো পথ নেই।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের রাজনীতি বর্তমানে “গভীর বিভ্রান্তি, অনিশ্চয়তা ও জটিলতার” মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সর্বদলীয় সমর্থনের কথা বলা হলেও রাজনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা কতটা এগিয়েছে—তা স্পষ্ট হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, “হতাশা থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে একটি মহল সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো নির্বাচন।”
রায়কে ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা
আগামীকাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ রায়কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি গোষ্ঠী পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ধরনের উস্কানি ও নাশকতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গঠন সময়ের দাবি। দেশকে কোনোভাবেই আবার সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
দীর্ঘ আন্দোলন ও ‘৫ আগস্টের বিজয়’ স্মরণ
গত ১৬ বছরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য জনগণ সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ তাদের রক্ত দিয়ে লড়াই করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে—এটি জনগণের ঐতিহাসিক অর্জন।”
তিনি আরও বলেন, এখন মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে চায়। “দেশ গড়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন কোনো ধরনের অস্থিরতা বা সংঘাতে নষ্ট না হয়—এটা নিশ্চিত করা জরুরি।”
ভাসানীর আদর্শ ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে “কালজয়ী ও দূরদর্শী নেতা” হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি স্বাধীনতা, মানবিক রাষ্ট্র ও দুঃখ-দারিদ্র্যমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন—কিন্তু তার পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখার আগেই তিনি বিদায় নেন।
বিএনপির সঙ্গে ভাসানীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, “মওলানা ভাসানী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি মশিউর রহমান যাদু মিয়াকেও তার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “ভাসানী ঠিকই বুঝেছিলেন যে জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও দাসত্বমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। তাঁর প্রতি আমাদের দায় রয়েছে।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
সভায় মির্জা ফখরুল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও জাতীয় স্বার্থে সবাইকে একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিভক্ত সমাজ ও বিভাজিত রাজনীতির মাধ্যমে স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।”
তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার মধ্য দিয়ে দেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগোতে সক্ষম হবে।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited