বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদাভাবে আয়োজন করা হলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ অপচয় হবে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “গণভোটের আড়ালে পতিত ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে কি না, তা এখন জাতিকে ভেবে দেখতে হবে।”
আজ বুধবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গণভোট নয়, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
তারেক রহমান বলেন, “গণভোট করতে গেলে রাষ্ট্রের বিপুল টাকা অপচয় হবে। সেই অর্থ দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত। গণভোটের নামে জনগণের করের টাকায় রাজনৈতিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো অনৈতিক ও অদূরদর্শী পদক্ষেপ।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গণভোটের মতো কৌশল নেয়, তারা নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে জনগণের রায়কে সম্মান করার।”
‘দুর্বল সরকারের সুযোগ নিলে বিপর্যয় অনিবার্য’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের চেষ্টা করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন,
“যদি কোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে দুর্বল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
তারেক রহমান বলেন, “নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে কিছু দল, যারা অতীতে রাজপথে আমাদের সঙ্গী ছিল, তারা এখন নির্বাচনী জটিলতা তৈরি করছে। পতিতদের ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা একসময় ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় ছিল, তারাই আজ গণতন্ত্রের কথা বলছে—এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণা।”
৭ নভেম্বরের অঙ্গীকার: তাবেদার রাষ্ট্র নয়, জাতীয় ঐক্য
বিএনপি নেতা বলেন, “৭ নভেম্বরের চেতনা হলো জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। আমাদের অঙ্গীকার—কেউ যেন বাংলাদেশকে আর তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দেশের জনগণ ও সেনাবাহিনীর গৌরব কেউ যেন ভূলুণ্ঠিত করতে না পারে, সেটিই আজকের শপথ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যারা অতীতে একদলীয় শাসন কায়েম করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তাদের পরাজয় ঘটেছে জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে যেন কেউ সেই অধিকার হরণ করতে না পারে, সে জন্য জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।”
নারীদের কর্মসংস্থান ও কৃষকদের অধিকার নিয়েও মন্তব্য
জামায়াত আমিরের সাম্প্রতিক প্রস্তাব—পোশাক কারখানায় নারীদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা করার সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন,
“৫ ঘণ্টা কাজ করলে বাকি সময়ের অর্থ কে দেবে? এতে নারীদের চাকরির সুযোগ কমবে। গণভোটের চেয়ে নারীদের কর্মসংস্থান রক্ষা এখন অনেক বেশি জরুরি।”
তিনি দেশের কৃষক ও কৃষি খাতের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, “গণভোটের নামে যে অর্থ ব্যয় হবে, তা আলু বা পেঁয়াজ চাষিদের ন্যায্যমূল্য দিতে ব্যবহার করলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। গণভোটের চেয়ে কৃষকদের ভর্তুকি ও সংরক্ষণাগার স্থাপন এখন অধিক জরুরি।”
‘গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত চলছে’ — মির্জা ফখরুল
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“দেশে এখন এক অদ্ভুত সংকট চলছে। গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার গভীর চক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই চক্রান্ত রুখে দাঁড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “৭ নভেম্বরের চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বিএনপি সেই চেতনায় বিশ্বাসী এবং যেকোনো প্রকার ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।”
পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই বক্তব্য শুধু গণভোট ইস্যু নয়, বরং চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দিকেও একটি বার্তা বহন করছে। এতে তিনি একদিকে সরকারকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অন্যদিকে বিরোধী রাজনীতিকদের উদ্দেশে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য বিএনপির আগামী নির্বাচনী কৌশল ও অবস্থান পরিষ্কার করেছে—তারা গণভোটের পরিবর্তে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়েই নিজেদের বৈধতা প্রমাণে বিশ্বাসী।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited