বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক। তাই আজকের বাস্তবতায় সকল জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
আগামীকাল ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে তিনি দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক মোড়-ফেরানো দিন। এই দিনে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে আধিপত্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সূচনা হয়। সেদিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সিপাহী ও জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বর কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়—এটি জাতীয় আত্মপরিচয়ের পুনর্জাগরণের দিন।”
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে দেশকে বিদেশি প্রভাব ও আধিপত্যবাদের কাছে সমর্পণ করেছিল। গণতন্ত্রকে হত্যা করে গঠন করা হয়েছিল একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা। জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে জাতিকে গভীর সংকটে ফেলা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “দেশমাতৃকার সেই চরম সংকটকালে ৭ নভেম্বর সিপাহী ও জনতা রাজপথে নেমে আসে। স্বদেশ রক্ষায় এবং গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের অঙ্গীকারে তারা অভূতপূর্ব সংহতি প্রদর্শন করে। ফলস্বরূপ, জিয়াউর রহমান মুক্ত হন এবং দেশে নতুন করে আশার আলো জ্বলে ওঠে।”
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশে তখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণের মনে ফিরে আসে স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস। কিন্তু স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি কখনোই এই অর্জন মেনে নিতে পারেনি। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তবু তার আদর্শে অনুপ্রাণিত মানুষ আজও গণতন্ত্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে আবারও দেশকে একই ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনের মুখে পড়তে হয়েছে। গত প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিজের হাতে বন্দি রেখেছিল। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি ও দমননীতির মাধ্যমে তারা এক ভয়াবহ শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি রেখে গণতন্ত্রের প্রতীককে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এ দেশের মানুষ আবারও মুক্ত গণতন্ত্রের পথে হাঁটার সুযোগ পেয়েছে। এখন প্রয়োজন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলেই গণতন্ত্র পূর্ণতা পাবে।”
তারেক রহমান বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে সুযোগ দিয়েছিল। তাই ৭ নভেম্বরের চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক—এই চেতনা আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।”
বাণীর শেষে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ৭ নভেম্বরের মহান চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited