বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত করেছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আপাতত মাদারীপুর-১ আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এ আসনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা, এক আসন স্থগিত
এর আগে গত ৩ নভেম্বর (রবিবার) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
সেই ঘোষণায় কামাল জামান মোল্লাকে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
তবে মঙ্গলবার হঠাৎ করে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “অনিবার্য কারণবশত মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন ঘোষণা স্থগিত রাখা হলো।”
তবে বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতের পেছনের কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
রুহুল কবির রিজভীর ব্যাখ্যা
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্ব মনে করছে মাদারীপুর-১ আসনটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু সাংগঠনিক বিষয় এবং প্রার্থিতা সংক্রান্ত জটিলতা এখনো পুরোপুরি সমাধান না হওয়ায় মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে।
একইসঙ্গে মাঠপর্যায়ের নেতাদের মতামত ও স্থানীয় ভারসাম্য বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন ঘোষণা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। খুব শিগগিরই বিষয়টি পর্যালোচনা করে নতুন তারিখে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে অংশ নিতে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগঠনের ঐক্য ও ন্যায়সঙ্গত প্রার্থিতা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
মাদারীপুর-১: ঐতিহাসিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাদারীপুর-১ আসন ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি এলাকা।
এই আসনটি মূলত শিবচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হন।
তবে স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।
এ কারণেই দলের উচ্চপর্যায়ে প্রার্থী মনোনয়নের আগে স্থানীয় ঐক্য, নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমর্থন যাচাইয়ের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন ঘিরে দলের অবস্থান
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপি বর্তমানে সারাদেশে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ করছে।
দলটি একাধিক আসনে বিকল্প প্রার্থীও রেখেছে, যাতে কোনো প্রার্থী অনুপযুক্ত বা বিতর্কিত হলে দ্রুত পরিবর্তন আনা যায়।
দলীয় নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, বিএনপি চায় স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতৃত্বকে মনোনয়ন দিতে, যাতে নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
এই প্রেক্ষাপটে মাদারীপুর-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখে আরও যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিতের সিদ্ধান্তটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে।
এটি দলীয় অভ্যন্তরীণ ঐক্য রক্ষা এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার প্রচেষ্টার অংশ।
একজন জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“আমরা চাই না কোনো এলাকায় প্রার্থী ঘোষণার পরপরই বিরোধ সৃষ্টি হোক। তাই নেতৃত্বের ঐক্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।”
মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত রাখলেও বিএনপি নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছে— এটি সাময়িক সিদ্ধান্ত।
দলটি দ্রুত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করবে।
এদিকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে, কে হবেন বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী।
সবকিছু মিলিয়ে মাদারীপুর-১ আসন এখন নির্বাচনী অঙ্গনে নতুন রাজনৈতিক কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited