‘চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে’— এই মন্তব্য করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য বজায় রেখে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার রাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রবাসে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
“দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত”
তারেক রহমান বলেন,
“শিগগিরই বিভিন্ন আসনে বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন। মনে রাখবেন, চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেবেন না।”
তিনি বলেন, দেশের তিন শত সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় ও সমর্থিত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিছু আসনে জোটের শরিকদেরও মনোনয়ন দেওয়া হবে।
“একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। যারা বঞ্চিত হবেন, তারা দলের স্বার্থে এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন— এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মনে রাখবেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।”
“ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য বজায় রাখতে হবে”
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানালে নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।”
তিনি অভিযোগ করেন,
“বিগত ১৫ বছরে পতিত স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এখনো বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন,
“দেশে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগস্ট মাসেই ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এটি সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না।”
তিনি আহ্বান জানান—
“নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দল সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিএনপির মহিলা দলসহ সচেতন নাগরিক সমাজের উচিত এলাকা ভিত্তিক প্রস্তাব তৈরি করে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তোলা।”
প্রবাসীদের ভোটে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন,
“প্রবাস থেকে এবারই প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে, তবুও এটি একটি বড় অগ্রগতি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ আরও সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
“সাইবার যুগে লড়াইও ডিজিটালের” — ফখরুল ইসলাম আলমগীর
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“এখন যুদ্ধটা সাইবার ওয়ার। কত বক্তৃতা বা জনসভা করলেন তা নয়— কত মানুষকে আপনি ডিজিটালি পৌঁছাতে পারলেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে বিএনপিকে আরও দক্ষ হতে হবে।”
তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন,
“আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও বার্তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন। এটি শুধু লাইক বা কমেন্টের বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব।”
“ঐক্যই বিএনপির শক্তি”
অনুষ্ঠানের শেষাংশে তারেক রহমান বলেন,
“জনগণের রায় পেলে বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। সেই দায়িত্বের লক্ষ্য হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নারী-পুরুষের সমান নিরাপত্তা ও প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সুরক্ষা।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আজ ঐক্যই বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের মধ্যে বিভক্তি নয়, ঐক্য দরকার— কারণ আমাদের সামনে ওত পেতে আছে গুপ্ত স্বৈরাচার। তাই প্রতিটি নেতা-কর্মীকে দলের পতাকা, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে একসাথে থাকতে হবে।”









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited