আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনের চিন্তা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “যাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, তাদের নিয়েই আমরা বৃহৎ জোট গঠনের চিন্তা করছি। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাই।”
সোমবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঐক্যের বার্তা
যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে দলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন নেতৃত্ব দেন। তারা জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
সেখানে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা দলের ভেতরে ঐক্য বজায় রাখতে চাই, জাতির মধ্যেও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই। ঐক্যই হচ্ছে বড় শক্তি। বিভেদের পথে কেউ যেন না যায়, সেটাই আমাদের মূল বার্তা।”
তিনি আরও জানান, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত দুই দিন ধরে বিভিন্ন বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার চলছে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
প্রার্থীদের বলা হচ্ছে— “বিভেদ নয়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে; একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে।”
বৃহৎ জোটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম—গণঅধিকার পরিষদ, জামায়াতে ইসলামী, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন—তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। লক্ষ্য একটাই—একটি বৃহৎ জাতীয় ঐক্য তৈরি করা।”
তিনি বলেন, “এই জোটের লক্ষ্য শুধু নির্বাচন নয়, বরং জাতীয় পুনর্গঠন। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়া।”
তারুণ্য নির্ভর রাজনীতির আহ্বান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, “যুবকদের নিয়ে, তারুণ্যের ভাবনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখি, সেটাকে আমরা ৩১ দফায় ধারণ করেছি। সারাদেশের তরুণ-যুবকদের রাজনৈতিক চিন্তা জানতে সফর করেছি। তাদের ভাবনা নিয়েই আমরা কর্মসূচি প্রণয়ন করছি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “একটি তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে—যেখানে কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, মেধা ও উদ্ভাবনই হবে উন্নয়নের চালিকা শক্তি। যে স্বপ্ন শহীদ জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন, যে স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরা দেখেছিলেন, আমরা সেই বাংলাদেশই গড়তে চাই।”
ঐক্য ও পরিবর্তনের বার্তা
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য। বিএনপি সেই ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীদের কাছে বার্তা একটাই—ঐক্য বজায় রাখুন, জনগণের ভরসা অর্জন করুন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, যেখানে ভিন্ন মত, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জায়গা পাবে; যেখানে জাতীয় স্বার্থই হবে সবার আগে।”
নির্বাচনের আগে নতুন কৌশল
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই বৃহৎ জোটের চিন্তা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটির কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। অতীতের মতো একক লড়াইয়ের বদলে এবার দলটি বিস্তৃত মিত্রজোট গঠনে মনোযোগী হচ্ছে।
তারা মনে করেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলনকে নতুনভাবে প্রণোদিত করতে এবং সরকারবিরোধী চাপ বাড়াতে বিএনপি জোটভিত্তিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চায়।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited