বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “আমাদের সন্তানদের জন্য রক্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সব দরজা আমাদের বন্ধ করতে হবে।” তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে— “না হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।”
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘নির্বাসনে থেকেও সংগ্রামের পথ থেকে সরে আসিনি’
স্মৃতিচারণ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “দুই-চার কলাম লেখার জন্য আমাকে প্রায় সাড়ে নয় বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। আয়না ঘরে থাকতে হয়েছে, নির্যাতনের কারাগারে দিন কাটাতে হয়েছে। কিন্তু কখনো সংগ্রামের পথ থেকে পিছিয়ে যাইনি।”
তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই আজকের তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। “এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য অনেকে জীবন দিয়েছেন, কারাগারে গেছেন, পরিবার হারিয়েছেন। আমরা তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে সেই রক্তের অঙ্গীকার পূরণ করব।”
‘ছাত্রদের অভ্যুত্থানই আমাদের প্রেরণার উৎস’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আজ আমরা ছাত্রদের অভ্যুত্থানের গৌরবময় ইতিহাস শুনলাম, রক্তঝরা দিনগুলোর কথা স্মরণ করলাম। সেই ইতিহাসই আমাদের প্রেরণা। অতীতের সেই আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার ভিত্তিতেই আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানদের জন্য প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি। যেভাবে অতীতে ছাত্র সমাজ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে, আজও সেই প্রজন্মকেই গণতন্ত্রের রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।”
‘দেশের প্রশ্নে ঐক্যই এখন মূল শক্তি’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে একটি নির্দলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও দেশের প্রশ্নে সবাইকে এক থাকতে হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি অনৈক্যের কারণে আবারও ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটে, জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। গণতন্ত্রের পক্ষে, মানুষের অধিকারের পক্ষে, ভোটের অধিকারের পক্ষে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাজনীতি কোনো ব্যক্তিস্বার্থের নয়; এটি মানুষের মুক্তি ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম। আমরা যদি এখনও বিভক্ত থাকি, তাহলে যারা গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে, তারাই ফিরে আসবে। তাই আজ ঐক্যের ডাকই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি।”
‘গণতন্ত্রের লড়াই শেষ হয়নি’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমাদের লড়াই কেবল একটি দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়; এটি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই। এই লড়াই জনগণের, এই লড়াই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে যেমন ছাত্র আন্দোলন ও জনগণের ঐক্য স্বৈরাচার পতনের পথ খুলে দিয়েছিল, তেমনি আজও দেশের মুক্তচিন্তার মানুষকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।
“বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই জনগণ যখন চায়, তখন পরিবর্তন আসবেই। এই বিশ্বাস আমাদের ধরে রাখতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
‘ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে ঐক্যের বিকল্প নেই’
বিএনপি নেতা বলেন, “আজকের দিনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, জনগণের কণ্ঠ রোধ করা এবং ভয়ভীতির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী— কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিই স্থায়ী হয়নি। জনগণের শক্তির কাছে তাদের পরাজয় অনিবার্য।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে, ভিন্ন মত প্রকাশ করতে পারবে, ন্যায়বিচার পাবে এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এই আদর্শেই আমরা লড়ছি, লড়াই চালিয়ে যাব।”
ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধেই মুক্তির পথ
সভা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এটি কেবল রাজনৈতিক সংগ্রাম নয়, এটি একটি নৈতিক দায়বদ্ধতা— আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য।”
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আসুন, আমরা সবাই এক হই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। এই মাটিতেই আবারও গণতন্ত্রের সূর্য উঠবে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited