রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বিমানবাহিনী ও আনসারের সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। এ ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার বিকেলে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন,
“এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আশা করি, সবাই নিরাপদে আছেন।”
তিনি আরও বলেন,
“অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাদের অকুতোভয় প্রচেষ্টা জনসেবার প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
স্বচ্ছ তদন্ত ও জননিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান
তারেক রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। তিনি বলেন,
“ঘটনাটির কারণ অনুসন্ধানে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত অপরিহার্য। একইসঙ্গে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের কারখানা এবং রাজধানীর মিরপুরের পোশাক কারখানায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। তারেক রহমানের মতে, এসব দুর্ঘটনা প্রশাসনিক তদারকি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নির্দেশ করে।
কার্গো ভিলেজে আগুনে আতঙ্ক, আহত ১৭ জন আনসার সদস্য
শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো এলাকা। আগুন ছড়িয়ে পড়ে একাধিক গুদাম ও কার্গো কনটেইনারে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে টানা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
আগুন নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ১৭ জন সদস্য আহত হন। এর মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ ভর্তি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।
ঘটনার সময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং বিমান চলাচল আংশিকভাবে ব্যাহত হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত অন্তত ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিকল্পভাবে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
একজন বিমানবন্দর কর্মকর্তা বলেন,
“আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কার্গো এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরের অন্যান্য টার্মিনালে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।”
ফায়ার সার্ভিসের সাহসী ভূমিকা প্রশংসিত
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বিমানবন্দরের সংবেদনশীল এলাকা হওয়ায় অভিযান পরিচালনায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তিনি বলেন,
“দাহ্য পণ্য ও কেমিক্যালের উপস্থিতি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে আমাদের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সাহসী ভূমিকার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
“এ ধরনের দুর্ঘটনায় যারা জীবন বাজি রেখে জনগণের পাশে দাঁড়ান, তারা প্রকৃত নায়ক। রাষ্ট্রের উচিত তাদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দেওয়া।”
অগ্নিকাণ্ডে জাতীয় উদ্বেগ বাড়ছে
শাহজালাল বিমানবন্দরের এ অগ্নিকাণ্ড সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া একাধিক দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতায় নতুন করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন।
নাগরিক মহলের অভিমত, সরকারের উচিত দ্রুত অগ্নি-নিরাপত্তা নীতিমালা হালনাগাদ করা এবং বিমানবন্দরসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
তারেক রহমানের ভাষায়,
“অগ্নিকাণ্ড এখন কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি জাতীয় সংকেত। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।”
