দীর্ঘ নয় দিন চিকিৎসা শেষে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে তাকে গুলশানের বাড়িতে নেওয়া হয়।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর খালেদা জিয়াকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এখন তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাসাতেই বিশ্রামে থাকবেন।
অবস্থা স্থিতিশীল, বললেন চিকিৎসক
দিনের শুরুতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান,
“ম্যাডামের সামগ্রিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ের তুলনায় তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সম্পন্ন করেছেন এবং এখন বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নেবেন।”
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়টি ‘সতর্ক আশাব্যঞ্জক’ হলেও এখনো তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। নিয়মিতভাবে চিকিৎসক দল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে পুনরায় হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।
হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া
চিকিৎসকদের পরামর্শে গত বুধবার রাতে বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর তার নানা শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ছিল রক্ত ও লিভার ফাংশন টেস্ট, ইকোকার্ডিওগ্রামসহ আরও কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষা।
হাসপাতালে অবস্থানকালে তার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড, যেখানে কার্ডিওলজিস্ট, হেপাটোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টসহ একাধিক অভিজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়া হাসপাতালে থাকার সময় কিছুটা দুর্বলতা ও শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন, তবে বর্তমানে তার রক্তচাপ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় সূচক স্বাভাবিক রয়েছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, বাসার শান্ত পরিবেশ ও নিয়মিত পরিচর্যা তার জন্য এখন সবচেয়ে উপযোগী।
দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তিনি নিয়মিতভাবে ওষুধ সেবন করছেন এবং খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন চলাফেরায় চিকিৎসকদের পরামর্শ কঠোরভাবে অনুসরণ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া এখন প্রতিদিন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন। তার বাসভবনে চিকিৎসকদের একটি স্থায়ী দল ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে রয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলে স্বস্তির সাড়া
বেগম খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে শুক্রবার রাতে বাসায় ফেরার পর থেকেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি—ম্যাডাম কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর দোয়া আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।”
দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা অব্যাহত রাখেন।
জনমনে প্রত্যাশা ও উদ্বেগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কেবল একটি রাজনৈতিক নেত্রীর ব্যক্তিগত বিষয় নয়—এটি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তার স্বাস্থ্যের উন্নতি বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও সংগঠনের মনোবলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, চিকিৎসক মহল বলছে—তার বয়স ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার কারণে সুস্থতা অর্জন একটি ধীরপ্রক্রিয়া। সঠিক যত্ন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ছাড়া জটিলতা ফিরে আসার আশঙ্কা থেকেই যায়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী বেগম খালেদা জিয়া আজও বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। চিকিৎসা শেষে তার বাসায় ফেরা বিএনপি ও সমর্থকদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির সংবাদ।
তবে চিকিৎসকদের মতে, এই স্বস্তি বজায় রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত চিকিৎসা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সম্পূর্ণ মানসিক শান্তি—যা এখন তার আরোগ্যের মূল শর্ত।
