আসন্ন জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা বিএনপি নেত্রীর হাতে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাংবাদিক মনির হায়দার।
হাসপাতালের শয্যায় খালেদা জিয়া, আমন্ত্রণ গ্রহণ
বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমানে অসুস্থতার কারণে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বুধবার মধ্যরাত থেকে তিনি সেখানে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
তিনি বলেন,
“ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জাতীয় জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে নেতৃবৃন্দ আজ হাসপাতালে যান। খালেদা জিয়া আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে তা পড়েন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।”
সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যিনি তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
ঐকমত্য কমিশনের কূটনৈতিক প্রয়াস
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন ও দলগুলোর মধ্যে সংলাপ স্থাপনে মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখছে। কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন,
“আমরা চাই এই সনদটি হয়ে উঠুক দেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। সব রাজনৈতিক দল, মত ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এটি জাতীয় পুনর্মিলনের সূচনা ঘটাবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমন্ত্রণপত্রটি বিএনপি নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি, কোনো রাজনৈতিক বার্তা বহন করিনি।”
জুলাই সনদ: ঐক্যের প্রতীক হিসেবে
আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত ‘জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
এই সনদের মূল উদ্দেশ্য—গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের কাছেও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে, যা বিএনপি নেতৃত্বের হাতে পৌঁছেছে।
যদিও তাঁর যুক্তরাজ্যে অবস্থান ও চিকিৎসাজনিত কারণে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক সাড়া
ঐকমত্য কমিশনের এই আমন্ত্রণকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি গঠনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান দেশের রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম মনে করেন,
“খালেদা জিয়ার মতো একজন প্রবীণ নেত্রীর হাতে এই আমন্ত্রণ পৌঁছে দেওয়া শুধু সৌজন্য নয়, বরং প্রতীকীভাবে এটি জাতীয় পুনর্মিলনের বার্তা বহন করে।”
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“জুলাই সনদে যদি সবাই অংশ নেয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে উঠবে।”
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও রাজনীতি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নানা জটিল রোগে ভুগছেন। ২০২১ সালের পর থেকে তিনি কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে রাজনীতি থেকে কার্যত দূরে থাকলেও তিনি দলের প্রতীকী নেতৃত্বের আসনে রয়েছেন।
দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও জাতীয় ঐকমত্যের যেকোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান।
আগামীকাল ইতিহাসের দিন হতে পারে
আগামীকাল শুক্রবারের অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজধানীতে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নির্মিত হয়েছে বিশেষ মঞ্চ ও মিডিয়া কর্নার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সদস্য বলেন,
“আমরা আশা করি—খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জুলাই সনদ সত্যিকারের জাতীয় চুক্তিতে রূপ নেবে।”
যদি সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়, তবে আগামীকালই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যুক্ত হতে পারে একটি ঐক্যবদ্ধ ও ইতিবাচক অধ্যায়।
