ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) মো. আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, “জুলাই-পরবর্তী সময়ের ছাত্র রাজনীতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরই ছিল আদর্শ ও মডেল।”
তিনি দাবি করেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নীতি, শৃঙ্খলা ও আদর্শের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতির যে ধারা গড়ে উঠেছে, সেটি শিবিরের দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও ধৈর্যের ফল।”
সোমবার (তারিখ) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রশিবির আয়োজিত **‘শহীদ ইকরামুল হক সাজিদ স্মৃতি আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা’**র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
“ছাত্রশিবির ছিল সবচেয়ে মজলুম সংগঠন”
ভিপি সাদিক কায়েম বলেন,
“বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রশিবির ছিল দেশের সবচেয়ে মজলুম ছাত্র সংগঠন। আমরা দেখেছি— জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই বিশ্বজিৎকে সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যা করা হয়েছিল। পরে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডও একই সংস্কৃতির ফল।”
তিনি আরও বলেন,
“একসময় শিবির সন্দেহে কাউকে মারার পর সেটি সমাজে বৈধতা পেত। কেউ প্রতিবাদ করত না। কিন্তু দুই হাজারেরও বেশি শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সেই অন্ধকার সময় থেকে মুক্তি পেয়েছি।”
তার মতে, আজকের শিক্ষার্থীরা ভয় নয়, নীতির ভিত্তিতেই নেতৃত্ব নির্বাচন করছে। “আমরা ছাত্রসমাজকে মুক্ত চিন্তার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে চাই,”— বলেন তিনি।
শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা
ঢাবির এই ভিপি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতের দুরবস্থা নিয়েও সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বিপুল অর্থ বরাদ্দ থাকে, কিন্তু আমাদের দেশে তা খুবই কম। বরাদ্দের বণ্টনও হয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে। গবেষণার অর্থ যদি যোগ্যতার ভিত্তিতে বরাদ্দ হয়, তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনকে দূষিত করা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণার হাবে পরিণত করতে হবে।”
অধ্যাপক বিলালের প্রশংসা ও প্রত্যাশা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হলো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা। জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে, তা প্রশংসনীয়।”
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, ছাত্র সংগঠনগুলো দলীয় সীমা পেরিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিবরণ
এই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় ‘জকসু নির্বাচনে এই সংসদ অরাজনৈতিক প্রার্থীদের সমর্থন দেবে’ মোশনের ওপর বিতর্ক। প্রতিযোগিতায় ২৪টি দল অংশ নেয়— প্রতিটি দলে তিনজন করে বিতার্কিক ছিলেন।
বিতর্কটি ট্যাব ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিটি দল তিনটি রাউন্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
চূড়ান্ত পর্বে বিরোধী দল হিসেবে ইতিহাস বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়, আর সরকারি দল হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ রানার্স আপ হয়।
ফাইনালে সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রুকসানা মিতু।
স্মরণ ও সম্মাননা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের শাখা সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের বড় বোন ফারজানা হক। তিনি বলেন, “সাজিদ জীবনের বিনিময়ে ন্যায়ের সংগ্রাম করেছেন। আজকের তরুণেরা যদি সত্য ও জ্ঞানের পথে থাকে, তবে তার ত্যাগ সার্থক হবে।”
অনুষ্ঠানের শেষে বিজয়ী দল ও বিতার্কিকদের হাতে পুরস্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা।
রাজনীতি থেকে নীতি ও জ্ঞানচর্চার আহ্বান
সভা শেষে ভিপি সাদিক কায়েম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,
“আমরা চাই ছাত্র রাজনীতি ফিরে যাক মূল উদ্দেশ্যে— দেশ ও সমাজের কল্যাণে, জ্ঞানের চর্চায়। ভয় বা হুমকি নয়, যুক্তি ও নীতির ভিত্তিতে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“জুলাই পরবর্তী সময়ের রাজনীতি দেখিয়েছে, ছাত্রসমাজ আবার জেগে উঠেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব এই জাগরণকে ইতিবাচক পথে এগিয়ে নেওয়া।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited