জাতীয় প্রতীকের তালিকাভুক্ত ‘শাপলা’ ফুলকে দলীয় প্রতীক হিসেবে চাওয়ার দৌড়ে এবার যুক্ত হলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেস। সোমবার (তারিখ) দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জমা দেন।
দলটির পক্ষ থেকে আবেদনপত্রটি ইসিতে জমা দেন দপ্তর সম্পাদক তুষার রহমান। বর্তমানে দলটি নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দকৃত ‘ডাব’ প্রতীকে নিবন্ধিত রয়েছে। তবে এবার তারা ডাবের পরিবর্তে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়েছে।
‘আমরাই প্রথম দাবিদার’— বললেন মহাসচিব
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম বলেন,
“আমরাই শাপলা প্রতীকের প্রথম দাবিদার। ২০১৩ সালে দল গঠনের পর থেকেই আমরা এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছি। নিবন্ধনের সময় কমিশনের বাধায় আমরা ডাব প্রতীক মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যদি ইসি কাউকে ‘শাপলা’ দেয়, তবে প্রথম অধিকার আমাদের।”
তিনি আরও বলেন, দলটির জন্মলগ্ন থেকে সব নথি, লোগো ও প্রচারপত্রে শাপলা ফুলের প্রতীকই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইসির নিবন্ধন ইতিহাস ও বিতর্ক
নির্বাচন কমিশনের নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৯ মে বাংলাদেশ কংগ্রেস নিবন্ধিত হয় ৪৪ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে, এবং তাদের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ‘ডাব’।
তবে দলটির দাবি, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তারা শাপলা প্রতীক ব্যবহার করছিল। ২০১৭ সালে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় কমিশন জানায়, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক— তাই এটি কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দযোগ্য নয়।
কমিশনের সেই নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশ কংগ্রেস বিকল্প হিসেবে ‘বই’ প্রতীক প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আবেদনপত্রে জমাকৃত নথি ও লোগোতে তখনও শাপলার চিহ্ন ছিল। সে সময় নিবন্ধন না পাওয়ায় দলটি আদালতের আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে দলটি ইসির নিবন্ধন পায়।
একই প্রতীকে আগ্রহ অন্য দলগুলোরও
‘শাপলা’ প্রতীকটি নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যারা দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতীক বরাদ্দের দাবিতে ইসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তবে ইসি জানায়, ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় এটি কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। নিবন্ধনবিহীন হওয়ায় এনসিপির আবেদনও গ্রহণ করা হয়নি।
এছাড়া গত জুনে নাগরিক ঐক্যও তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘শাপলা’ বা ‘দোয়েল পাখি’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের আবেদনও নাকচ হয়।
ইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জাতীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা ফুল’ ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না। তবে নিবন্ধিত দলগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যাচাই করে কমিশন পর্যালোচনা করতে পারে।”
কেন ‘শাপলা’ প্রতীকের এত আকর্ষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘শাপলা’ প্রতীকটির প্রতি দলগুলোর আকর্ষণ মূলত জাতীয় পরিচয় ও ঐতিহ্যের প্রতীকী মর্যাদা থেকে উৎসারিত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে।
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন,
“জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করার মধ্যে একটি প্রতীকী ক্ষমতার বার্তা থাকে। দলগুলো মনে করে— জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করলে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক সংযোগ তৈরি হয়।”
ইসির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ কংগ্রেসের এই নতুন আবেদন নির্বাচন কমিশনের জন্যও একটি নতুন প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে জাতীয় প্রতীক সংরক্ষণের আইনি বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে নিবন্ধিত একটি দলের পুরোনো দাবি— এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন মূল প্রশ্ন।
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, সব আবেদন যাচাই করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এর আগে, প্রতীকের বিষয়ে একাধিকবার আইনি জটিলতায় পড়েছে ইসি। বিশেষ করে ২০১৮ ও ২০২০ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে কয়েকটি প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে আদালতের আদেশও আসে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের শাপলা প্রতীক দাবি এমন এক সময় সামনে এলো, যখন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দল নতুন করে প্রতীক পরিবর্তন ও নিবন্ধনের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়— নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন মেনে এই প্রতীকের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়।
