জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ না পেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দলটি। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “ইসিকে আমরা স্পষ্ট জানিয়েছি—নিবন্ধন দিতে হলে শাপলাই দিতে হবে। শাপলা ছাড়া এনসিপির নিবন্ধন হবে না, আমরাও তা গ্রহণ করব না।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শাপলা ইস্যুতে টানা আড়াই ঘণ্টার বৈঠক
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এনসিপি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। দলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বৈঠকে ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
বৈঠকে প্রথমে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া তরুণ ভোটারদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়। তবে মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শাপলা প্রতীক।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা শুধু একটাই প্রশ্ন করেছি—প্রতীক দিতে আপত্তি কেন? দুই ঘণ্টা তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ব্যাখ্যা দিতে না পারায় আমরা ধরে নিয়েছি, নীতিগতভাবে তারা এতে সম্মতি দিয়েছেন। শেষে আমরা স্পষ্ট বলেছি—শাপলা না দিলে তার সংবিধানগত ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
“শাপলা আমাদের অধিকার”—নাসীরুদ্দীনের হুঁশিয়ারি
এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “ইসির সামনে দুটি রাস্তা—একটি হলো বিদ্যমান প্রতীকগুলোর (ধানের শীষ, তাঁত, সোনালী আঁশ) কোনোটি বাতিল করা, অথবা আমাদের শাপলা দেওয়া। আমরা চাই, কোনো প্রতীক বাতিল না হোক; বরং নতুন করে শাপলাকে যুক্ত করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, “শাপলা আমাদের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। আমরা আইনি ও সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা দেখি না। ইসি যদি কোথাও থেকে চাপ অনুভব করে, তবে আমাদের জানাক। আমরা কোনো চাপ প্রয়োগ করব না, কিন্তু অন্য কোনো অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা রাজপথে মোকাবিলা করব।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা চাই ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করুক। কিন্তু কমিশন যদি আগের ইসির মতো বিতর্ক সৃষ্টি করে, তবে তার দায় কমিশনের ওপরই বর্তাবে।”
শাপলা প্রতীক ঘিরে আইনি জটিলতা
ইসি সূত্র জানায়, ‘শাপলা’ প্রতীকটি বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা বিধিতে নেই। ফলে বিধি সংশোধন ছাড়া এই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসি এনসিপিকে প্রতীক বাছাইয়ের জন্য চিঠি দেয় এবং ৭ অক্টোবরের মধ্যে তা জানানোর অনুরোধ জানায়। কিন্তু এনসিপি ওই চিঠির জবাবে জানায়, তারা বিকল্প কোনো প্রতীক গ্রহণ করবে না এবং শাপলাকে তালিকায় যুক্ত করতে নির্বাচন বিধি সংশোধনের দাবি জানায়।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি বর্তমানে আইন শাখার পর্যালোচনায় আছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে।
“আমরা গণতান্ত্রিকভাবে লড়ব”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা শাপলা প্রতীক পেতে লড়াই চালিয়ে যাবো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এনসিপির নিবন্ধন ইনশাল্লাহ শাপলার মাধ্যমেই হবে, অন্য কোনো প্রতীকে নয়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি শাপলা না দেওয়া হয় এবং এর ফলে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে তার দায় আংশিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে।”
জার্মান রাষ্ট্রদূত ও আইএমএফ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক
এর আগের দিন (বুধবার) এনসিপির নেতারা ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লৎস এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশের নবনিযুক্ত আবাসিক প্রতিনিধি ম্যাক্সিম ক্রিসকোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি, আসন্ন নির্বাচন, এবং এনসিপির ২৪ দফা অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এনসিপি প্রতিনিধিরা জানান, দলটি টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কার ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় নীতিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির নেতা সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, নুসরাত তাবাসসুম, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, তাহসিন রিয়াজ, সাইফ মোস্তাফিজ, নাভিদ নওরোজ শাহ, মুশফিকুর রহমান জোহান প্রমুখ।
প্রেক্ষাপট: নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এনসিপি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি দুটি নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যা নাগরিক সমাজের কিছু প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত।
দলটি শুরু থেকেই ‘শাপলা’ প্রতীক দাবি করে আসছে। এনসিপি নেতাদের ভাষায়, এই প্রতীক বাংলাদেশের শান্তি, ঐক্য ও নাগরিক সমৃদ্ধির প্রতীকী রূপ—যা তাদের দলীয় দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই অনড় অবস্থান একদিকে দলীয় পরিচয়কে সুসংহত করতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে ইসির ওপরও বাড়তি চাপ তৈরি করবে—নির্বাচনী বিধি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা সামনে এনে।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited