বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণই বিএনপির অনুপ্রেরণা এবং আস্থার প্রতীক। দেশের মানুষ যখনই স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে, তারা সবসময় বিএনপির পক্ষেই রায় দিয়েছে।
সোমবার বিকেলে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের মূলগ্রাম এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গুত্ববরণকারী প্রবীণ বিএনপি নেতা মোতালেব আকনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “আমরা দেখছি, মোতালেব আকন আজ হুইলচেয়ারে বসে আছেন। কেন তিনি এমন অবস্থায়—এখানে উপস্থিত সবাই জানেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সহিংস আঘাতেই আজ তিনি এমন অবস্থায় পৌঁছেছেন। কিন্তু তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ নেতারাই বিএনপির প্রাণশক্তি।”
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছি—থাকতে বাধ্য হচ্ছি। গত ১৭ বছরে আমাদের দলের বহু নেতা-কর্মী নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছেন। কেউ শহীদ হয়েছেন, কেউ জেল-জুলুমে অতিষ্ঠ। কিন্তু তবুও আমরা থেমে থাকিনি—আমাদের লক্ষ্য জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা।”
তিনি বলেন, “এনাফ ইজ এনাফ। অনেক হয়েছে আন্দোলন, মিছিল, সংগ্রাম। এখন সময় এসেছে ঐক্যের। আসুন আমরা সব মতভেদ ভুলে এক জায়গায় দাঁড়াই। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি—বিভিন্ন দল, বিভিন্ন আদর্শ থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিক শত্রুতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “এখন আমাদের নতুন প্রতিযোগিতা শুরু করা উচিত—কে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে পূরণ করতে পারে, কে কৃষক, শ্রমিক, তরুণ প্রজন্মের জন্য বাস্তব উন্নয়ন ঘটাতে পারে। বিএনপি সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রস্তুত।”
ভার্চুয়াল সাক্ষাতে তিনি মোতালেব আকনের সন্তানদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের মতো লাখো তরুণ-তরুণী আছে যারা বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের নিয়েই ভাবছি—তারা যেন ন্যূনতম মৌলিক অধিকার নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে। আগামী দিনে আমরা মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সমাজ গড়তে চাই।”
কৃষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। কোটি কৃষকের শ্রমেই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বাজার অস্থিরতার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃষি উৎপাদনকে টেকসই করা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি বলেন, “দেশের মা-বোনদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আমরা করছি। আন্দোলন নয়, এবার উন্নয়ন ও কল্যাণের প্রতিযোগিতা হোক।”
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও সাংবাদিক সাঈদ খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এলিজা জামান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মোতালেব আকনের হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু একজন প্রবীণ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং তৃণমূলের কর্মীদের প্রতি দেশনায়ক তারেক রহমানের ভালোবাসা ও মমতার প্রতিচ্ছবি।”
রিজভী আরও বলেন, “তারেক রহমান বারবার প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি মানবিক, সংবেদনশীল এবং তৃণমূলের প্রতি নিবেদিত নেতা। কর্মীদের কষ্ট ও অবদান তিনি ভুলে যান না।”
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, “দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা প্রতিটি জেলায় যাচ্ছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজ নিচ্ছি, বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছি। এভাবেই বিএনপি জনগণের দল হয়ে উঠছে।”
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাঈদ খান বলেন, “বিএনপি কেবল রাজনৈতিক দল নয়, এটি মানবিকতার দল। বিপদে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো বিএনপির ঐতিহ্য।”
ভার্চুয়াল সাক্ষাতে মোতালেব আকন, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর জেলা বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোতালেব আকন তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিলেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে তাঁর এই ইচ্ছার কথা প্রচারিত হলে বিষয়টি তারেক রহমানের নজরে আসে। পরে তিনি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক রুমনকে নির্দেশ দেন মোতালেব আকনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে। এরপরই শুরু হয় ভার্চুয়াল সাক্ষাতের প্রস্তুতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সাক্ষাৎ কেবল মানবিক উদ্যোগই নয়, তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। এটি বিএনপি’র সাংগঠনিক ঐক্য ও নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
