বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনী জোট গঠন, প্রার্থী মনোনয়ন এবং দলীয় কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
দ্রুত নির্বাচন, দ্রুত স্থিতিশীলতা
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি শুরু থেকেই বলেছে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। গত ১৭ বছরে দেশের মানুষকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর প্রভাব শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিলক্ষিত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন জনগণের হাতে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। নির্বাচিত সরকার জনগণের চাহিদা অনুযায়ী দেশের নীতি নির্ধারণ করবে। রাতারাতি সব সমস্যা সমাধান হবে না, তবে ধীরে ধীরে সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
একক নাকি জোটবদ্ধ নির্বাচন
বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটি জটিল বিষয় হলো—নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবো নাকি জোটবদ্ধভাবে। বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়েছে। আমরা চাই সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সেই সকল দলের এবং সাধারণ মানুষের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, “৩১ দফার পরিকল্পনা, যা প্রথম ২০১৬ সালে প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে আরও বিকশিত হয়ে ২৭ দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল, সেটি সব দলের সঙ্গে পরামর্শে তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনে আমরা এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেব, যিনি এলাকার সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম।”
বিএনপি বিরোধী জোটের উদ্বেগ নেই
সাক্ষাৎকারে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যদি কোনো দল আলাদা জোট গঠন করে, তা বিএনপির জন্য উদ্বেগের কারণ নয়। নির্বাচন সবসময় প্রতিযোগিতামূলক হয়। বিএনপি আগেও বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এখানে উদ্বেগের কিছু নেই।”
মনোনয়ন কৌশল: জনগণের সমর্থন মূল ভিত্তি
মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “আমরা কখনোই পারিবারিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাবের ভিত্তিতে প্রার্থী বেছে নিইনি। প্রধানত সেই প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যুক্ত, সমস্যাগুলো বোঝেন এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন রাখেন। এখানে দলের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সমর্থনও প্রার্থীর নির্বাচনী শক্তি নির্ধারণ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। আমরা মেজরিটি মতামতকে গুরুত্ব দিই। আমাদের লক্ষ্য এমন প্রার্থীকে বেছে নেওয়া, যার প্রতি এলাকার তরুণ, নারী, মুরুব্বি এবং ছাত্র-ছাত্রীর সমর্থন রয়েছে। শুধু দল নয়, সাধারণ মানুষেরও সমর্থন থাকা প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।”
দলীয় সিদ্ধান্ত ও তৃণমূলের ভূমিকা
তারেক রহমান বলেন, “মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে শুধু দল নয়, মানুষের অংশগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যার প্রতি সর্বাধিক সমর্থন রয়েছে, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।”
বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি নিশ্চিত করেন, “আমি দ্রুত দেশে ফিরবো এবং আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে থাকবো। দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
