গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও জাতীয় পার্টির নেতা নুরুল হক নুর বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট আমলে শেখ হাসিনার গদিকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা আন্দোলন করেছিলাম; ওই সময়ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা এমন বর্বরোচিত হামলার শিকার হইনি।” শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেএই মন্তব্য করেন।
নুর অভিযোগ করেন, গতবারের ওপর তার অপমৃত্যুর পরিকল্পনা বা হামলা “টার্গেট অপারেশন” ছিল — তাদের (নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের) লক্ষ্য করে অন্যদের মেসেজ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি পরবর্তী সিরিয়ালে পড়ে যেতে না চান, তাহলে এই ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক—যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোক—তার বিচার করতে হবে এবং চাকরিচ্যুত করতে হবে।”
নুর আরও দাবী করেন, সরকারকে সহযোগিতা করলেও তারা কখনোই সরকারের সুবিধাভোগী নন। তিনি বলেন, “আমরা কোনো ভাগবাটোয়ারার অংশীদার নই। এখন কিন্তু দেশে বিশৃঙ্খলা, নির্বাচন নিয়ে বিভাজন, পাহাড়ে অস্থিতিশীল অবস্থা—এসব অবস্থায় যদি বহুল আকাঙ্খিত নির্বাচন না হয়, দেশ আবার সংকটে পড়বে।” নুর প্রশ্ন রেখেছেন, একটি দলের প্রধানকে এভাবে আক্রমণ করা হলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সমঝোতার নির্বাচন না হলে ক্ষমতাসীন দলেরই নির্দেশে যারা ‘ইশারা পান’ তারা নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাবে এবং অন্যদের ওপর হামলা করে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হবে।
নুর অভিযোগ করেছেন, হামলার উপর তৎক্ষণাৎ কার্যকর, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য বিচার হতে না পারায় দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচার-প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা কমছে। তিনি বলেন, গত ৩৫ দিন পার হওয়ার পরও কেবল গতানুগতিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে; তাতে তাদের কার্যক্রমে গাফিলতির ছাপ পাওয়া গেছে। “একটা বিচারেরোগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে—তবু আমরা গাফিলতিরই সাক্ষী দেখছি,” দাবি করেন নুর।
পার্শ্বপট হিসেবে স্মরণ করানো প্রয়োজন—গত ২৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। ঘটনাকালে তাঁর মাথায় আঘাত লাগার পাশাপাশি নাকের হাড় ভেঙে যায়; পরে চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন।
বিমানবন্দর সাক্ষাৎকারে নুর কড়া ভাষায় বলেন, “বিগত সময়ে নির্বাচনের নামে এমন বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল—সেই সুবাদে সাবেক নির্বাচন কমিশনারের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে, এক প্রধান বিচারপতি দেশে না থেকে পালিয়ে গেছেন। যদি আমাদের ওপর হামলার বিচার না করা হয়, আমরা বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের গলাতেও গামছা পরাব।”
নুর দাবি করেছেন, তার ওপর হামলার প্রকৃত দায়ীদের খুঁজে বের করে, জনগণের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করা না হলে ক্ষমতার অপব্যবহার রাশ টাঘানো কঠিন হবে। তিনি পুনর্বার আর্জি জানান—সরকার যদি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তার পূর্বশর্ত হলো দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন অনুসন্ধান ও জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার সময় নুর সাংবাদিকদের বলেন, তিনি নিজের শরীর ও নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক; একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি গভীর উদ্বিগ্ন। নুরের এসব অভিযোগ ও দাবি সরকারি পর্যায় থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে তা সময়ই বলবে; কিন্তু ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ও প্রশ্নকেই তীব্র করেছে।
