জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতীক ‘শাপলা’ না পেয়ে নতুন দ্বিধায় পড়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্প্রতি দলটির কাছে যে তালিকা পাঠিয়েছে, তাতে কলা, বালতি, ফুটবল, উটপাখি, কাপ-পিরিচ, হাঁস ও বেলুনসহ মোট ৫০টি প্রতীক রাখা হয়েছে। তবে এনসিপির আবেদনে উল্লেখ করা প্রধান প্রতীক ‘শাপলা’ তালিকায় না থাকায় রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিতে হবে এনসিপিকে। গত মঙ্গলবার দলটির কার্যালয়ে ইসির পাঠানো চিঠি পৌঁছায়।
কাঙ্ক্ষিত প্রতীক ‘শাপলা’ বাতিল
ইসি জানিয়েছে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় শাপলা প্রতীক নেই। ফলে এটি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চিঠিতে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য এনসিপির আবেদন প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও প্রতীক বিষয়ে নিয়ম মানা ছাড়া বিকল্প নেই।
এনসিপি তাদের নিবন্ধনের আবেদনে পছন্দের প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোনের নাম উল্লেখ করেছিল। কিন্তু কমিশনের তালিকায় শাপলা নেই, অন্যদিকে কলম ও মোবাইল ফোন রাখা হয়েছে।
এনসিপির ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
চিঠি হাতে পাওয়ার পরদিনই এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন—
“শাপলা প্রতীক পেতে আমাদের কোনো আইনি বাধা নেই– এ মর্মে আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই চিঠির নিষ্পত্তি না করেই তারা অসাংবিধানিক ও স্বেচ্ছাচারী উপায়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। ২১ শতকে এসে কমিশন প্রতীকের তালিকায় রেখেছে আলমিরা, উটপাখি, কাপ-পিরিচ কিংবা থালাবাটি। হাস্যকর এসব প্রতীক সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, রাজনৈতিক দলকে প্রতীক বেছে নিতে বাধ্য করার এই প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
ইসির ব্যাখ্যা
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ জানান, “এবার নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি দল আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ২২টি দলের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। প্রাথমিক বিবেচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি ছাড়াও নতুন দল বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে।”
তিনি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়।
প্রতীকের দীর্ঘ তালিকা
ইসির পাঠানো তালিকায় যেসব প্রতীক রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— আলমিরা, উটপাখি, কলম, কলস, কাপ-পিরিচ, কম্পিউটার, কলা, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, চিংড়ি, চশমা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, তবলা, তরমুজ, থালা, দালান, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, ফ্রিজ, বক, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বালতি, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, লাউ, লিচু, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রতীক সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য হলেও অনেকগুলো প্রতীক আধুনিক প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হয়ে পড়েছে।
প্রতীক বিতর্কে নতুন ধারা
বাংলাদেশে প্রতীক শুধু ভোটের প্রতীক নয়, রাজনৈতিক দলের পরিচয়ের অন্যতম হাতিয়ার। অনেক সময় প্রতীকই জনমনে দলকে চিহ্নিত করে। তাই কাঙ্ক্ষিত প্রতীক না পাওয়াকে দলগুলো তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত করে দেখে থাকে। এনসিপিও এর ব্যতিক্রম নয়।
বর্তমানে এনসিপির সামনে দুটি বিকল্প খোলা— কমিশনের তালিকা থেকে একটি প্রতীক গ্রহণ করা, অথবা আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে ‘শাপলা’ প্রতীক পুনরায় দাবি করা। তবে এর মধ্যে কোন পথে যাবে দলটি, তা স্পষ্ট নয়।
শেষ কথা
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রতীক নিয়ে জটিলতা নতুন নয়। প্রতীককে ঘিরেই দলীয় জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং প্রচারণা পরিচালিত হয়। ফলে এনসিপির মতো নতুন দলের জন্য প্রতীক বাছাই একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে তারা কোন প্রতীককে গ্রহণ করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
