দলের শীর্ষস্থানীয় অন্যতম ছয় নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লিতে ওই বৈঠক হবে বলে ভারতের দ্য ওয়ালের খবর।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ওই বৈঠকে ডাক পাননি, যার বিরুদ্ধে দু‘দিন আগেই ‘টেলিগ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগে খবর এসেছে। যদিও তিনি দ্য সান ২৪-এর কাছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নয়া দিল্লিতে পৌঁছেছেন বলে দ্য ওয়াল নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া ওই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ খ ম মোজাম্মেল হক, দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও এসএম কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর যেকোনো সময় নয়া দিল্লিতে তাদের সঙ্গে বসবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
গেলবছর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বেশীরভাগ শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতারা ৫ আগস্টের আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে দৃশ্যত ‘স্থায়ীভাবে’ থাকছেন।
টানা ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়ানো আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, স্থগিত রয়েছে নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধন।
বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে গ্রুপ গঠন করে দলকে সক্রিয় রাখতে নানা কার্যক্রম নেওয়া হলেও তাতে তেমন কোনো ফল আসেনি। নেতাদের অনলাইন কার্যক্রম নিয়েও তৃণমূলে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
অবস্থা যখন এরকম, খোদ শেখ হাসিনা দলের নেতাদের রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। নেতাকর্মীরা শুধু কিবোর্ড যোদ্ধা হয়ে থাকুক, সেটাও তিনি চান না। এমনও শোনা গেছে, রাজপথে না নামলে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সেক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে ‘হাইব্রিড তকমা’ পাওয়া অনেক নেতাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে দ্য সান ২৪কে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দিন কয়েক আগে নয়া দিল্লিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এলেও ওবায়দুল কাদের কেন ডাক পেলেন না সে বিষয়ে দ্য ওয়ালের নির্বাহী সম্পাদক অমল বিশ্বাস ‘নথিপত্র ঠিক না থাকার’ কথা উল্লেখ করেছেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিজেই ঠিক করেছেন কাদের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ লন্ডন থেকে এসে তিন সপ্তাহ ভারতে কাটিয়ে গেলেও হাসিনা তাকে সাক্ষাৎ দেননি।
ভারতে আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে এ ধরনের বৈঠকে ভারত সরকারের সায় রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
সূত্রের বরাতে দ্য ওয়াল জানিয়েছে, কূটনৈতিক কারণে সম্ভবত নয়া দিল্লি প্রকাশ্যে এই ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইবে না। তাছাড়া কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগও সরকারিভাবে এ ধরনের বৈঠকের খবর প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
দ্য ওয়াল বৈঠকের বিষয়টি বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত করার পর দ্য সান ২৪ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। বৈঠকের বিষয়টি ‘সঠিক’ হলেও কারা সেই বৈঠকে অংশ নেবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে যেটিই হোক, ভারত সরকারের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে দেশ ছাড়ার এক বছরের মাথায় শেখ হাসিনা দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গী ছিলেন শুধু তার বোন শেখ রেহানা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হওয়ার সুবাদে হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আগে থেকেই দিল্লিতে ছিলেন। কোরবানির ঈদের সময় মায়ের সঙ্গে দিন সাতেক কাটিয়ে গিয়েছেন তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয়।
শেখ হাসিনার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে তার অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই গোপনীয়তা বজায় রেখেছে“ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়েও উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে আসছে দেশটি।
একজন অতিথি রাষ্ট্রপ্রধানকে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেরকম বরাদ্দ রয়েছে বলে জানা গেছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি দিল্লির বাংলোতে একটি অফিসও করে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে।
প্রায় এক বছরে নিজের সন্তানদের বাইরে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। দলের মধ্যে একমাত্র সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একই মামলায় অভিযুক্ত। সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
মামলা নিয়ে আলোচনার জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
অনলাইন প্লাটফের্মে বিভিন্ন দিন নির্দেশনামূলক বক্তৃতা দিলেও আওয়ামী লীগের পলাতক অনেক নেতা দেখা করার অনুমতি চাইলেও সে সুযোগ পাননি।