সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে চলছে পাখি শিকার
এস, এম, রুহুল তাড়াশী, স্টাফ রিপোর্টার
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। শস্যক্ষেত আর বিলাঞ্চলে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখি বিচরণ করছে। কিন্তু এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের মাঝেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাখি শিকারিরা। বিষটোপ, জাল এবং বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে পাখি নিধন চলছে প্রতিদিন। স্থানীয়দের অভিযোগ—বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে শিকার বন্ধ হচ্ছে না।
সরেজমিন চিত্র
ফসলের জমিতে পানি দেওয়ার সময় মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসা পোকামাকড় খেতে নেমে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে রয়েছে সাদা বক, শালিক, চড়ুই, ডাহুক ও চ্যাগা। শিকারিরা কৌশলে এসব পতঙ্গের মধ্যে বিষাক্ত কীটনাশক ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। পাখিরা সেগুলো খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে বা মারা যায়। এরপর সহজেই তাদের ধরে ব্লেড বা ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়।
অন্যদিকে কোথাও বড় বাঁশের সঙ্গে উঁচু করে জাল টানানো হয়। পাখিদের ধাওয়া দিয়ে উড়িয়ে এনে ওই জালে আটকানো হয়। একবার ফাঁদে পড়লেই শিকারিরা বস্তায় ভরে ফেলে এবং পরে বাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে শুধু পাখির জীবনই হুমকির মুখে পড়ছে না, ভেঙে পড়ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যও।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা
স্থানীয় সংগঠন ভিলেজ ভিশন-এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২০ সাল থেকে তারা চলনবিল এলাকায় পাখি শিকার বন্ধে কাজ করছেন। “আমরা শিকারিদের নিষেধ করি এবং আটকানো পাখি অবমুক্ত করি। তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছাড়া এ কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ফল আনতে পারে না,” তিনি বলেন।
অন্যদিকে দি বার্ডস সেফটি হাউজ-এর চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস জানান, কয়েকটি সংগঠন সচেতনতামূলক কাজ চালালেও তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতার অভাব ও সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে স্থায়ীভাবে শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞ মত
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার বলেন, “বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। মৌসুমি সময়ে দেশীয় পাখি খাদ্য ও নিরাপত্তার জন্য চলনবিলে আসে। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকর পতঙ্গ খেয়ে কৃষিরও উপকার করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পাখি হারিয়ে গেলে কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড়ের আধিক্য বাড়বে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, “পাখি শিকার একটি অপরাধ। আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছি। যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপসংহার
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নির্বিচারে পাখি শিকার শুধু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে না, স্থানীয় কৃষি ও সমাজের ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চল থেকে দেশীয় পাখি বিলীন হয়ে যেতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি প্রশাসনের উদ্যোগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন – অবাধে পাখি নিধন – পাখি শিকার বন্ধের দাবি
