মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় রাণীনগর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর ভোগান্তির পর অবশেষে সড়কের নতুন পাকাকরণের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পার্শ্বরাস্তার সংযোগস্থলের পাকাকরণ কাজ চলমান রয়েছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে রোড মার্কিং এর কাজ শেষ করে সড়ক বিভাগের কাছে সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
নওগাঁ সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের অনেক চেষ্টায় সকল জটিলতা কাটিয়ে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করে গত বছরের আগষ্ট মাস থেকে সড়কের পাকাকরণ কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে সড়কের কাজ সম্পন্ন হওয়ার ফলে রাণীনগর উপজেলাসহ আশেপাশের উপজেলার লাখ লাখ মানুষ খুব সহজেই চলাচল করতে পারছেন। এলাকাবাসি জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। নতুন এই সড়ক হওয়ায় বিশেষ করে ধান অধ্যুষিত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন। আবার এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। সবকিছু আবার নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদরের বাসট্যান্ড গোলচত্বর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডির আওতায় ছিল। সড়কে যানবাহন চলাচলে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে এলজিইডি থেকে সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সড়কটি রাণীনগর-আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ হয়ে নাটোরের সিংড়ার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সড়কটি আরও প্রশস্তকরণ, টিকসই ও মজবুতকরণের জন্য নতুন করে পাকাকরণের টেন্ডার দেওয়া হয়। এতে ২২ কিলোমিটার সড়ক, সড়ক জুড়ে ৪টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৫ কোটি টাকা। ওই টেন্ডারে ২২ কিলোমিটার সড়ক ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পান। আর ৪টি সেতু নির্মাণে অন্য একটি ঠিকাদার কাজটি পায়।
ওই বছরই সড়কের সমস্ত কার্পেটিং তুলে কোন রকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখে ঠিকাদার। আর সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু সড়ক ও কালভার্টের ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করে বার বার সময় চেয়ে আবেদন করতে থাকেন। অতিরিক্ত সময়েও সড়কের ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় ২০২১ সালের মে মাসে ওই ঠিকাদারের কাজের চুক্তিপত্র বাতিল করে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর নতুন করে আবারো টেন্ডার দেওয়া হলে টেন্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন আগের ঠিকাদার। ফলে আবারও কাজ আটকে যায়। এতে করে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পরেন এলাকার লাখ লাখ মানুষ। একপর্যায়ে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের জোরালো তৎপড়তার কারণে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মামলা নিষ্পত্তি হলে আবারও টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর গত বছরের আগষ্ট মাসে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের জন্য ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার অন্তে নতুনভাবে কাজটি পান এমএ জাহের লিমিটেড নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এরপর কাজটি পেয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কের পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন করেন।
নতুন সড়কে চলাচল করতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পথযাত্রী রাকিবুল ইসলাম, সাইম উদ্দীন, জুবায়ের হোসেনসহ আরও অনেক যাত্রীরা বলেন, সাড়ে পাঁচ বছর ধরে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। অবশেষে ভোগান্তি নামক সেই দুঃখ্যের আগুনে শান্তির পানি দিয়ে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে নতুন করে উন্নয়নের মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তারা বলেন, সড়ক যখন খারাপ ছিল তখন রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর মাত্র ১৪ কিলোমিটার সড়কে যেতে সময় লাগতো প্রায় এক ঘন্টা। এখন নতুন সড়ক হওয়ায় যাতাযাতে সময় লাগছে মাত্র ১৫-১৬ মিনিট। দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির পাকাকরণের কাজ শেষ করায় লাখ লাখ মানুষের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাশেদুল হক বলেন, প্রতিনিয়তই সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে ২২ কিলোমিটার সড়কের পাকাকরণ কাজ। সড়কটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিবো। দীর্ঘ দুর্ভোগ শেষে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষদের সরকারের আধুনিক যোগাযোগের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পেরে আমরাও আনন্দিত।
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, উপ-নির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই সড়কের পাকাকরণের কাজ আবার নতুন করে শুরু করার জন্য সড়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুয়ারে অনেকবার ধর্না দিয়েছি। অবশেষে সকল জটিলতা কাটিয়ে নতুন পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। সাংসদ আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগ্রহের কারণেই এলাকাবাসির কাছে দেওয়া আমার অঙ্গিকার দ্রুত শতভাগ সফল করতে পেরেছি।