দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক আরও তীব্র হচ্ছে। এবার এ নিয়ে সরাসরি ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, “ভারতকে বলবো, শেখ হাসিনাকে থামান। তাঁকে এভাবে দিল্লিতে রেখে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক নষ্ট করবেন না।”
শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি কাঠামোর চেয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বেশি জরুরি” শীর্ষক ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন, যা দেশে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের বিপদে ফেলছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা তাঁকে বলি দিল্লীশ্বরী। দিল্লি থেকে তিনি যেভাবে কথা বলছেন, তাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নিরীহ নেতাকর্মীরা বিপদের মুখে পড়ছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে চলে গিয়ে এখন দেশে আন্দোলনের উসকানি দেওয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়।”
তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি ব্যক্তির কারণে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হওয়া উচিত নয়। “ভারতের উচিত হবে শেখ হাসিনাকে সংযত রাখা। রাজনৈতিক বক্তব্যের নামে তিনি দুই দেশের বন্ধুত্বের সেতু ভাঙছেন,” বলেন তিনি।
জুলাই সনদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সুব্রত চৌধুরী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জুলাই যোদ্ধারা যদি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করেন, তাহলে সেই সনদের কোনো মূল্য নেই। কারণ, এই সনদ জুলাই যোদ্ধাদের রক্তের আখরে লেখা। অথচ এনসিপি নেতারা এতে সই না করে দরকষাকষিতে লিপ্ত হয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের ঘাটতিরই পরিচয়।”
গণফোরামের এই নেতা আশা প্রকাশ করেন যে, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অযথা বিবাদ সৃষ্টি করেছে। ফলে নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি হয়েছে।”
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যানের মন্তব্য
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রও ব্যর্থ হবে। “অন্তর্বর্তী সরকার সফল হতে হলে জুলাইয়ের চেতনা সফল হতে হবে। এই ব্যর্থতার দায় বিএনপি, জামায়াত কিংবা এনসিপি— কেউই এড়াতে পারবে না,” বলেন কিরণ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ত্রিমুখী রাজনৈতিক লড়াই চলছে। জুলাই সনদের মাধ্যমে জনগণ ঐক্যের বাংলাদেশ চেয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়নের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। তাঁর আশঙ্কা, “এই বিভাজন চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে।”
কিরণ অভিযোগ করেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অপশক্তি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। “নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়,” তিনি বলেন, “জবাবদিহিতা না থাকলে কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলেও স্বৈরাচার রয়ে যাবে।”
ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতা
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজিত এই ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিতার্কিক দল। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় বিইউবিটি দল।
বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, আসিফ সুমিত ও লামিয়া তিথি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুব্রত চৌধুরীর এই মন্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান এবং তার বক্তব্যের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এখন দুই দেশের সম্পর্কের নতুন আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited