গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি, এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের রাতুল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটের গুদামে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। গুদামে প্রচুর পরিমাণে ঝুট কাপড় (গার্মেন্টসের অবশিষ্ট বর্জ্য) মজুত থাকায় আগুন মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে শিখা
রাতুল অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. খালিদ হোসেন বলেন, “রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গুদামের ভেতর ধোঁয়া বের হতে দেখি। কিছুক্ষণ পরই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো গুদামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা প্রথমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। পরে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে রাত চারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। ততক্ষণে গুদামের সবকিছুই আগুনে পুড়ে যায়। পুরো গুদাম ঘর ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি, তবে ধারণা করছি কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হতে পারে।”
ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর এ টি এম মাহমুদুল হাসান বলেন, “খবর পাওয়ার পর আমাদের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। গুদামে প্রচুর পরিমাণে ঝুট কাপড় থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।”
তিনি আরও জানান, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। “প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, শর্ট সার্কিট বা অসতর্কতার কারণে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে,” বলেন তিনি।
আশপাশে আতঙ্ক
ঘটনার সময় আশপাশের এলাকাবাসী আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, “রাতের দিকে বাইরে বের হয়ে দেখি চারদিকে আগুনের আলো। ভয় পেয়ে সবাই মিলে পানি ঢালতে শুরু করি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।”
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, তবে কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েকটি দোকান ও ঘরের জানালা ও ছাউনি তাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তদন্ত
এ টি এম মাহমুদুল হাসান বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে। গুদামে থাকা প্রচুর ঝুট কাপড়, প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাঠ ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
গার্মেন্টস এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, শ্রীপুর ও আশপাশের এলাকায় গার্মেন্টস ও ঝুটের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এসব গুদামে অধিকাংশ সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক লাইনের জটিলতা, অতিরিক্ত ঝুট সঞ্চয় এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অভাবই বড় ঝুঁকি তৈরি করে।
তারা বলেন, ঝুট কাপড় অতি দাহ্য হওয়ায় এতে আগুন লাগলে তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ঝুট গুদামে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং নিয়মিত পরিদর্শন অত্যন্ত জরুরি।
প্রশাসনের নজরদারি দাবি
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ আহত না হলেও বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। শ্রীপুর পৌরসভার মেয়রও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited