চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর পৃথক অভিযানে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় পলাতক আসামি গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা এই আসামিকে বৃহস্পতিবার রাতে দোভাষী বাজার এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-৭ এর একটি বিশেষ দল।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ. আর. এম. মোজাফ্ফর হোসেন শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার গহিরা হাড়িয়া পাড়ার বাসিন্দা।
মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে, ইপিজেড থানায় দায়ের হওয়া একটি শিশু ধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি মো. গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারার দোভাষী বাজার এলাকায় আত্মগোপনে আছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালায়। পরবর্তীতে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস উদ্দিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে তাকে আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে ইপিজেড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।”
মামলার প্রেক্ষাপট ও ঘটনার বিবরণ
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানায় ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী কিশোরীর মা। অভিযোগে বলা হয়, আসামি গিয়াস উদ্দিন নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীটিকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার পরপরই গিয়াস উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সে আত্মগোপনে ছিল।
ভুক্তভোগীর পরিবার বহুবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে ধরতে পারেনি। পরে মামলাটি র্যাব-৭ এর কাছে আসে, এবং তারা গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়াস উদ্দিনের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছিল র্যাব। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
র্যাবের মন্তব্য ও আইনগত অগ্রগতি
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাগুলোতে পলাতক আসামিদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে।”
তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সমাজে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এমন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
মানবাধিকার ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশেষ করে কিশোরী ও শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সমাজে উদ্বেগ বাড়ছে। আইনজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা বাড়ানোই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত কয়েক বছরে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা বেড়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যান উল্লেখ করছে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, শুধু আইন প্রয়োগ নয়— সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এই ধরনের অপরাধ রোধে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
গ্রেফতারকৃত আসামি গিয়াস উদ্দিনকে শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে চার্জশিট দাখিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
র্যাবের কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আসামির গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited