আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার–ভিডিপি)। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৬ লাখ সদস্য মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
তিনি বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আনসার সদস্যরা নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও আস্থার প্রতীক হয়ে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস–এর সঙ্গে আলাপকালে মহাপরিচালক এসব তথ্য জানান।
“ভোটকেন্দ্রে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আনসার সদস্যরা”
মেজর জেনারেল সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, “এবারের নির্বাচনে প্রশিক্ষিত ও যাচাইকৃত আনসার সদস্যদের পাঠানো হবে। তারা সদর দপ্তরের সঙ্গে ডিজিটাল সিস্টেমে সংযুক্ত থাকবে, যাতে তাদের দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ধাপ মনিটর করা যায়। জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে তারা কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভোটকেন্দ্রে আনসার সদস্যরা প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হবে। পরবর্তীতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনী থাকবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরে। আমরা চাই—প্রথম স্তরেই স্থিতি বজায় থাকুক।”
ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমে রিয়েল টাইম নজরদারি
এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আনসার বাহিনী ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম চালু করছে বলে জানান ডিজি। তিনি বলেন, “প্রতিটি সদস্যের তথ্য আমাদের সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে—এনআইডি নম্বর, কিউআর কোড, কর্মতথ্যসহ সবকিছু একীভূতভাবে ব্যবহার হবে। এতে সদস্যদের অবস্থান, দায়িত্ব পালনের দক্ষতা ও আচরণ রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এখন থেকে বাহিনী ব্যক্তিনির্ভর নয়, বরং সিস্টেমনির্ভর। এতে জবাবদিহি বাড়বে এবং কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক তদন্ত করা সম্ভব হবে।”
নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, “গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে প্রতিজন সদস্যকে মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে লিডারশিপ, অ্যাডভান্স ও ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং। নির্বাচনের আগে রিফ্রেশার কোর্সও দেওয়া হবে, যেখানে আচরণবিধি, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগ কৌশল শেখানো হবে।”
তিনি জানান, গত বছর ১ লাখ ২০ হাজার সদস্য প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। বর্তমানে দেড় লাখের মতো সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, এবং মোট ৩ লাখ নতুন সদস্য তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে।
“ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে অধিকসংখ্যক সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে মেগাসিটি এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়,” যোগ করেন তিনি।
নারী ও তরুণদের নেতৃত্বে আনসার বাহিনী
মেজর জেনারেল সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, “আনসার বাহিনীতে নারী সদস্যের অংশগ্রহণ এখন প্রায় ৫০ শতাংশ। নারী-পুরুষ উভয়েই নেতৃত্বের দায়িত্বে রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন পুরুষ ও একজন নারী প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে, যাতে মাঠপর্যায়ে সমতা বজায় থাকে।”
তিনি জানান, যুব ও নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির জন্য সদস্যদের বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে। এতে বাহিনী হবে আরও তরুণ, কর্মক্ষম ও গতিশীল।
নতুন ইউনিফর্ম ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম
নির্বাচনে আনসার বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র ও নিরস্ত্র—দুই ধরনের দায়িত্বেই থাকবেন। তাদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম, জ্যাকেট ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।
“সদর দপ্তর থেকে সরাসরি মনিটরিং করা হবে, যাতে মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা দায়িত্ব পালনে সঠিকভাবে সমন্বিত থাকে,” বলেন ডিজি।
শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতে বড় পরিবর্তন
বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এটি বাহিনীর পেশাগত মানোন্নয়নের একটি অংশ।”
উন্নয়ন, মানবসম্পদ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে দেশে আনসার ও ভিডিপি সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫৯ লাখই স্বেচ্ছাসেবক বা অস্থায়ী সদস্য। তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
ডিজি বলেন, “‘সঞ্জীবন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে সদস্যরা ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক্যাল কাজ, নার্সিং, ট্যুরিজম ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো আধুনিক পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি যোগ করেন, “আনসার বাহিনী শুধু নির্বাচনের সময় নয়—সারা বছর উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখে। আমাদের লক্ষ্য, আনসার বাহিনীকে জনগণের ফোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, যেখানে নিরাপত্তা, সেবা ও দক্ষতা একসূত্রে গাঁথা থাকবে।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited