কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও পতিত জমি চাষের লক্ষ্য নিয়ে এই সহায়তা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপজেলার ৪৬৫ জন কৃষক ও কৃষাণীর হাতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের শাকসবজি, সরিষা, মসুর ও সূর্যমুখীর বীজ এবং প্রয়োজনীয় সার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাগিব হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কাজী শফিকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মুখলেসুর রহমান এবং বিভিন্ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, “বর্তমান সরকার কৃষকদের পাশে আছে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, বৈচিত্র্য আনা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নিয়মিতভাবে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এই সহায়তা পেলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে আরও উৎসাহের সঙ্গে চাষাবাদ করবেন।”
তিনি আরও জানান, আগামী মৌসুমে আরও বেশি কৃষককে এই কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। “আমরা চাই, কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। ছোট চাষিরা যদি সরকারের সহায়তা পান, তাহলে তারা আবারও মাঠে ফিরবেন, সেটিই আমাদের উদ্দেশ্য,” যোগ করেন তিনি।
বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়ে স্থানীয় কৃষক সমাজে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্দীপনা। উপজেলার দুলালপুর গ্রামের কৃষাণী শাহানা বেগম বলেন, “আমরা সাধারণ কৃষকরা অনেক সময় বীজ ও সার কিনতে হিমশিম খাই। এবার সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে, তাই আমরা বসতবাড়ির আঙিনায়ও সবজি চাষ করতে পারব। এতে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, কিছু বিক্রি করেও বাড়তি আয় করা যাবে।”
সরিষা বীজ পাওয়া কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, “সারের দাম এখন অনেক বেড়েছে। সরকারের এই সহায়তা না পেলে হয়তো সরিষা চাষ করা যেত না। এখন পরিকল্পনা করেছি, গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সরিষা আবাদ করব।”
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষকরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শীতকালীন সবজি, সরিষা, মসুর ও সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। প্রণোদনার ফলে রবি মৌসুমে অব্যবহৃত জমিও চাষযোগ্য হয়ে উঠবে, যা স্থানীয় কৃষিতে নতুন গতি এনে দেবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ বছর মোট ৪৬৫ জন কৃষক ও কৃষাণীকে বিনামূল্যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরিষা বীজ পেয়েছেন ২০০ জন, মসুর ১০০ জন, সূর্যমুখী ৫০ জন এবং শাকসবজির বীজ পেয়েছেন ১১৫ জন কৃষক। প্রতিজন কৃষককে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার সরবরাহ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রণোদনা প্রাপ্ত কৃষকরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং ব্রাহ্মণপাড়াকে রবি ফসল উৎপাদনে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কৃষি নির্ভর এ উপজেলার অর্থনীতিতে রবি মৌসুমের ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকারি সহায়তা সময়মতো পৌঁছানোয় কৃষকরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।
সরকারি এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কৃষক সমাজ। তারা বলছেন, বাজারে সার ও বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই আবাদ নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। তবে এই প্রণোদনার ফলে এখন তারা আশাবাদী, মাঠে আবারও প্রাণ ফিরবে, জমি ভরে উঠবে সোনালি ফসলে।
